আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দিন মিছিল থেকে তুলে নিয়ে এক ছাত্রীকে দলবদ্ধ ধর্ষণ করা হয়েছে। হত্যা করে পেট কেটে লাশ পদ্মা নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে। রাজশাহীতে এমন ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি করছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। আর ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে তারা দুই তরুণকে আটক করে থানা-পুলিশে সোপর্দ করেছে।ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগে দুজনকে আটক করা হলেও ঘটনার শিকার ছাত্রী কে ছিলেন, তা কেউ নিশ্চিত করতে পারেনি। পুলিশও বলছে, গত ৫ আগস্ট তারা এমন ঘটনার কথা শোনেননি।
এ পর্যন্ত কোন অভিভাবকও তার মেয়ের সঙ্গে এমন ঘটনার কথা থানা-পুলিশকে জানান নি। এ ব্যাপারে কোন জিডিও হয়নি। ‘ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের’ শিকার ছাত্রীর পরিচয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রাজশাহীর নেতারাও নিশ্চিত করতে পারেননি।তবে ৫ আগস্ট নগরীর পঞ্চবটি শ্মশানঘাট এলাকায় এমন ঘটনা ঘটানোর অভিযোগে শনিবার দুপুরে ও বিকালে ওই দুই তরুণকে আটক করেন শিক্ষার্থীরা। এদের নাম মো. সনি ও মো. কটা। দুজনের বাড়িই পঞ্চবটি এলাকায়। তাদের বয়স আনুমানিক ২৫-৩০ বছর। সনি দিনমজুরের কাজ করেন। কটা ভ্যানচালক। তারা ছাত্রলীগের কর্মী দাবি করছেন শিক্ষার্থীরা।
তাদের দাবি, এই ছাত্রলীগের কর্মীরা ৫ আগস্ট শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেছিল। আটক দুজন ধর্ষণ ও হত্যার কথা তাদের কাছে স্বীকার করেছেন। তবে আটক দুজনের দাবি, তারা ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন। মারের চোটে তারা স্বীকারোক্তি দিয়েছেন।বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমন্বয়ক সালাহউদ্দিন আম্মার জানান, ৫ আগস্ট থেকেই তারা শুনছিলেন যে সেদিন দুপুরে এক ছাত্রীকে মিছিল থেকে তুলে নিয়ে ধর্ষণ করা হয়েছে। ধর্ষণের পর বুক চিরে লাশ পদ্মা নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কোনভাবেই তারা নিশ্চিত হতে পারছিলেন না। দুপুরে তারা খবর পান, রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশন এলাকায় শিক্ষার্থীদের হাতে একজন আটক হয়েছেন যিনি ৫ আগস্টের ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত। তারা রেল স্টেশনে গিয়ে সনিকে পান। তখন সনি ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করেন। এরপর তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে কটাকে খুঁজতে থাকেন তারা।
বিকাল ৫টার দিকে নগরের আলুপট্টি পদ্মার পাড় এলাকায় অভিযুক্ত কটাকে খুঁজে পাওয়া যায়। শিক্ষার্থীরা তাকে ধরতে গেলেই তিনি পালানোর চেষ্টা করেন। এরপর শিক্ষার্থীরা নদীতে সাঁতরে তাকে ধরে ফেলেন। এ সময় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী ও স্থানীয় লোকজন তাকে গণপিটুনি দিতে শুরু করেন। সেখানে তাকে উদ্ধার করে সন্ধ্যায় বোয়ালিয়া থানায় নিয়ে আসা হয়।সমন্বয়ক সালাহউদ্দিন আম্মার দাবি করেন, সনি ও কটা দুজনেই তাদের কাছে ধর্ষণ ও হত্যার পর বুক চিরে দিয়ে লাশ পানিতে ভাসানোর কথা স্বীকার করেছেন। ভুক্তভোগী ছাত্রী কে তা জানেন না জানিয়ে সালাহউদ্দিন আম্মার বলেন, হয়তো অভিভাবক লজ্জায় এমন ঘটনা প্রকাশ করেননি।
এ জন্য থানায় কোন জিডিও হয়নি। মেয়েটির পরিচয় পাওয়া যায়নি।রাত সাড়ে নয়টায় থানায় গিয়ে দেখা গেছে, আহত অবস্থায় সনি ও কটাকে একটি বেঞ্চে বসিয়ে রাখা হয়েছে। সেখানে উপস্থিত কয়েকজন সাংবাদিক ঘটনার বিষয়ে তাদের কাছে জানতে চাইছিলেন। কটা ও সনি সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন, তারাও এলাকায় শুনেছেন যে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে এবং হত্যার পর মেয়েটিকে পাশেই পদ্মা নদীতে ফেলে দেওয়া হয়েছে। তারা ঘটনার সঙ্গে জড়িত হিসেবে ৮-১০ জনের নাম শুনেছেন। তারা এই নামগুলোও সাংবাদিকদের সামনে বলেছেন। দুজন দাবি করেন, তারা ঘটনার সঙ্গে জড়িত নন। শিক্ষার্থীদের মারের চোটে তারা স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। কটা বলেন, কত মার সহ্য করা যায়?থানায় এ সময় প্রায় অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী হাজির হন। তারা দুজনের শাস্তির দাবিতে নানা শ্লোগান দিতে থাকেন। এ সময় পুলিশ আহত দুজনকে হাসপাতালে নিতে চাইলে শিক্ষার্থীরা বাঁধা দেন।
তারা বলেন, ধর্ষকের কোন চিকিৎসা করতে দেওয়া হবে না। একপর্যায়ে সমন্বয়ক সালাহউদ্দিন আম্মার শিক্ষার্থীদের বোঝালে তারা চিকিৎসা দেওয়ার ব্যাপারে সম্মত হন। থানায় থাকা অনেক শিক্ষার্থীর সঙ্গেই সাংবাদিকদের কথা হয়। কিন্তু কেউই ভুক্তভোগী ছাত্রীর পরিচয় নিশ্চিত করতে পারেননি। তারা নিজেরাও ওই ছাত্রীকে চেনেন না বলে জানিয়েছেন। থানায় এসেছিলেন মহানগর যুবদলের সদস্য তানভীর আহমেদ সুইট। তিনি দাবি করেন, একজন নয়; পঞ্চবটি শশ্মানঘাটে দুই ছাত্রীকে দলবদ্ধ ধর্ষণের পর পেট কেটে লাশ নদীতে ভাসিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে তিনিও কারও পরিচয় জানেন না।নগরীর বোয়ালিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম মাসুদ পারভেজ বলেন, ৫ আগস্ট এমন কোন ঘটনা এলাকায় ঘটেছে কি না তা তিনি জানেন না। এ ব্যাপারে কোন অভিভাবকও কিছু জানাননি। ওসি জানান, আটক দুজন আহত, তাই তাদের হাসপাতালে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে।
রাত ১০টা পর্যন্ত থানায় কেউ লিখিত অভিযোগ নিয়ে আসেননি। অভিযোগ না এলে কী করবেন, এমন প্রশ্নে ওসি বলেন, যারা ধরে এনেছেন, তাদের কাছ থেকে শুনব। কেউ অভিযোগ করেন কী না দেখব। তারা কোন অভিযোগ না করলে দেখব তাদের নামে অন্য কোন অভিযোগ আছে কী না। সে মোতাবেক আইনি ব্যবস্থা নেব।