ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ফজলুল হক মুসলিম হলে চোর সন্দেহে তোফাজ্জল (৩০) নামে এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। হত্যার আগে ওই ব্যক্তিকে ক্যান্টিনে ভাত খেতে দিয়েছিলেন হলের শিক্ষার্থীরা।এ ঘটনায় ছড়িয়ে পড়া একটি ভিডিওতে দেখা যায়, তোফাজ্জলকে আটক করে ভাত খেতে দিয়েছে ফজলুল হক মুসলিম হলের শিক্ষার্থীরা।
এ সময় তোফাজ্জলকে উদ্দেশ্য করে একজনকে বলতে শোনা যায়, ‘এই শুরু কর’।এ সময় তোফাজ্জল হাত ধুয়ে খেতে শুরু করেন। ভাত মুখে দেওয়ার পর একজন জিজ্ঞেস করেন, ‘বড় ভাই খাবার কেমন?’ উত্তরে তিনি বলেন, ‘আল্লাহর রহমতে ভালো’। এবার একজনকে বলতে শোনা যায়, ‘তুই খাওয়া অবস্থায় যদি না থাকতি, আবারও মার খাইতি মিথ্যা বলার জন্য’। এ সময় আশেপাশে থাকা শিক্ষার্থীদের হেসে উঠতে শোনা যায়। একজন হাসতে হাসতে কটাক্ষ করে বলে ওঠেন, ‘খাবারের মান নাকি ভালো!’ এর আগে বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় চোর সন্দেহে তোফাজ্জলকে আটক করেন ফজলুল হক মুসলিম হলের শিক্ষার্থীরা। এ সময় তাকে কয়েক দফায় মারধর করা হয়। পরে রাত ১২টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিলে দায়িত্বরত চিকিৎসক তোফাজ্জলকে মৃত ঘোষণা করেন। নিহত তোফাজ্জলের বাড়ি বরগুনার পাথরঘাটা উপজেলার কাঠালতলি ইউনিয়নে।
তিনি মানসিক ভারসাম্যহীনতায় ভুগছিলেন বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।হলটির শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সন্ধ্যায় হলে ক্রিকেট টুর্নামেন্ট চলছিল। এমন সময় তোফাজ্জল নামে ওই ব্যক্তি হলে প্রবেশ করলে শিক্ষার্থীরা দুপুরে ছয়টি মোবাইল চুরির ঘটনার চোর সন্দেহে মূল ভবনের অতিথি কক্ষে নিয়ে তাকে মারধর ও জেরা করতে থাকে। একপর্যায়ে, তাকে নিয়ে হল ক্যানটিনে খাওয়ানো হয়। এরপর এক্সটেনশন ভবনের অতিথি কক্ষে নিয়ে দ্বিতীয় দফায় বুক, পিঠ, হাত ও পায়ে ব্যাপক মারধর করেন একদল শিক্ষার্থী।এ সময় পা থেকে রক্ত বের হতে থাকে। এরপর রাত পৌনে ১০টার দিকে ফের মূল ভবনের অতিথিকক্ষে নিয়ে মারা হয়।
১০টার দিকে প্রক্টোরিয়াল মোবাইল টিমের সদস্যরা এলে মারধরকারী শিক্ষার্থীরা তফাজ্জলকে তাদের হাতে তুলে দিতে অস্বীকৃতি জানান। পরে কিছু শিক্ষার্থী ও কয়েকজন হাউস টিউটরের সহায়তায় তাকে প্রথমে শাহবাগ থানায় এবং পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নিয়ে গেলে দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সাইফুদ্দীন আহমদ কালবেলাকে বলেন, আমি বিষয়টি জানার পর এবং খোঁজখবর নেওয়ার পর ফজলুল হক মুসলিম হলের প্রাধ্যক্ষকে ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করে আজকের মধ্যেই হলের বিধি অনুযায়ী হল পর্যায়ে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতের জন্য বলেছি। এরপর একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। সেই কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে যেন দ্বিতীয়বার এমন ঘটনা না ঘটে সেই ব্যবস্থা আমরা নেব। ক্যাম্পাসে যে বা যারাই আইন নিজের হাতে তুলে নেবে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ফজলুল হক হলের ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে, আজই শাহবাগ থানায় মামলা দায়ের করা হবে।