নেপালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ করার সরকারের প্রচেষ্টা শেষ পর্যন্ত গণআন্দোলনে রূপ নিয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রশ্ন কেবল বাকস্বাধীনতার নয়, বরং জীবিকা ও যোগাযোগের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হারানোর আতঙ্কেই ফুঁসে উঠেছে সাধারণ মানুষ।
নেপালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীর সংখ্যা ডেটারিপোর্টালের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে নেপালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীর সংখ্যা ছিল প্রায় ১৪.৩ মিলিয়ন, যা মোট জনসংখ্যার ৪৮.১%। তুলনায়, প্রতিবেশী ভারতের সক্রিয় ব্যবহারকারীর হার মাত্র ৩৩.৭%।
কেপিওসের বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ২০২৪ সালের শুরু থেকে ২০২৫ সালের শুরু পর্যন্ত নেপালে ব্যবহারকারী বেড়েছে প্রায় ৭৫ লাখ (৫.৬%)। কোন প্ল্যাটফর্ম সবচেয়ে জনপ্রিয়?ফেসবুক: ১৪.৩ মিলিয়ন ব্যবহারকারী ,ইনস্টাগ্রাম: ৩.৯ মিলিয়ন ব্যবহারকারী ,লিঙ্কডইন: ২.০ মিলিয়ন ব্যবহারকারী. এগুলোই নেপালের তরুণদের যোগাযোগ,
ব্যবসা এবং উপার্জনের অন্যতম প্রধান মাধ্যম। কেন এত জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম? নেপালের প্রায় ৭৭.৪% মানুষ গ্রামীণ এলাকায় বসবাস করে। কঠিন পাহাড়ি ভূগোল অনেক কমিউনিটিকে একে অপর থেকে বিচ্ছিন্ন রেখেছে। এছাড়া, বিপুলসংখ্যক নেপালি বিদেশে কর্মরত বা শিক্ষার্থী হিসেবে অবস্থান করছে।
তাদের জন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম শুধু যোগাযোগ নয়, আয়ের উৎসও। তাই এগুলো বন্ধ হলে দেশের একটি বড় অংশ আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়বে। অর্থনীতি ও যুব সমাজের সংকট বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে নেপালে ১৫–২৪ বছর বয়সী যুবকদের বেকারত্বের হার ছিল ২০.৮%।
চাকরির সন্ধানে অনেক যুবক বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছেন। এদিকে, নেপালের জিডিপির ৩৩.১% আসে প্রবাসী আয়ের (রেমিট্যান্স) মাধ্যমে। ফলে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধের উদ্যোগকে সরাসরি জীবিকা ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তার ওপর আঘাত হিসেবে দেখছেন অনেকেই। এই কারণেই সরকারবিরোধী আন্দোলনে রাস্তায় নেমেছে ছাত্র-জনতা।