টাঙ্গাইলের ধনবাড়ীতে বাঁশহাটি মহল্লার ‘অভয়ারণ্য’ পাঠাগারের পাঁচ শতাধিক বই লুট এবং ভয়ভীতি দেখিয়ে পাঠাগার বন্ধের ঘটনায় উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সমঝোতা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৈঠকে কোনো নিষিদ্ধ ঘোষিত বই বা নাস্তিক্যবাদ প্রচারের বইপুস্তক পাওয়া যায়নি।
বৈঠক শেষে রোববার (২৭ এপ্রিল) রাত ৯টায় উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সব বই-পুস্তক পাঠাগারে আনুষ্ঠানিকভাবে ফেরত দেওয়া হয়েছে। এসময় বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং পাঠাগারের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
ধনবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহিন মাহমুদের সভাপতিত্বে উপজেলা পরিষদ হলরুমে টানা দুই ঘণ্টাব্যাপী সমঝোতা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন ধনবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এসএম শহিদুল্লাহ, উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি খায়রুল মুন্সি, উপজেলা জামায়াতের আমির মিজানুর রহমান, অভয়ারণ্য পাঠাগারের সভাপতি সুপ্তি মিত্র, সম্পাদক সঞ্জয় চন্দ্র ঘোষ, ইসলামী খেলাফত মজলিশের নেতা গোলাম রব্বানী এবং স্থানীয় সংবাদকর্মীরা।
বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, গণমাধ্যমে এসব নিয়ে আর কোনো খবর করা যাবে না। সোমবার থেকে পাঠাগার যথারীতি খোলা থাকবে। ভুল বোঝাবুঝি থেকেই এমন ঘটনা ঘটেছে। এরপর থেকে সবাই সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখবেন।
অভয়ারণ্য পাঠাগারের সম্পাদক সঞ্জয় চন্দ্র ঘোষ জাগো নিউজকে বলেন, স্থানীয় প্রশাসন বিষয়টি মীমাংসা করে দিয়েছেন। উনারা আমাদের কাছে ভুল স্বীকার করেছেন। আমরাও তাদের সঙ্গে একমত পোষণ করে সবকিছুর সমাধান করেছি। পাঠাগার একটি পবিত্র স্থান। জ্ঞান-বিজ্ঞান ও ধর্ম চর্চার জন্য সব ধরনের বইয়ের সমাহার থাকবে। উনারা আমাদের লুট হওয়া ৪ থেকে ৫ বস্তা বই ফেরত দিয়েছেন৷
ধনবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহিন মাহমুদ জাগো নিউজকে বলেন, উভয় পক্ষকে নিয়ে বসে বিষয়টি শান্তিপূর্ণভাবে সমাধান করা হয়েছে। সভায় উভয়পক্ষই ভবিষ্যতে পাশাপাশি থেকে একসঙ্গে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। পরে অভয়ারণ্য পাঠাগারে গিয়ে সবার উপস্থিতিতে বইগুলো কমিটির কাছে হস্তান্তর করা হয়।
বাংলাদেশ ইসলামী খেলাফত মজলিশ ধনবাড়ী উপজেলা শাখার নেতা গোলাম রব্বানী কয়েক দিন আগে ফেসবুক স্ট্যাটাসে ঘোষণা দেন, ‘ধনবাড়ী অভয়ারণ্য পাঠাগার নাস্তিকদের কারখানা। সেখানে নিষিদ্ধ ঘোষিত বই পুস্তক রয়েছে। এ পাঠাগারকে উচ্ছেদ করা হবে। এজন্য সকলের সহযোগিতা কামনা করছি।’
এরই প্রেক্ষিতে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এক দল উচ্ছৃঙ্খল যুবক পাঠাগারে প্রবেশ করে পাঠকদের ধমকিয়ে বের করে দেন। পরে আলমারি থেকে দেশ-বিদেশের প্রতিষ্ঠিত লেখকদের পাঁচ শতাধিক বই বস্তাবন্দি করে নিয়ে যান। পরে এসব বস্তাবন্দি বই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অফিসে রেখে চলে যান।