শহিদুল ইসলাম: টাঙ্গাইল জেলায় ধনবাড়ী উপজেলার বলিভদ্র ইউনিয়নের কেরামজানি পশ্চিমপাড়া গ্রামে জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে একই পরিবারের নারীসহ পাচজনকে কুপিয়ে জখম করে জমি দখলের অভিযোগ উঠেছে।
ভুক্তভোগীর পরিবার সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে প্রতিবেশী সরওয়ার্দী (৫০) ও সফর উদ্দিন (৫৫) এর সাথে জমি নিয়ে বিরোধ চলে আসছিল। এ নিয়ে এলাকায় বেশ কয়েকবার সালিশী বৈঠকও বসে কিন্তু কোনো সমাধান হয়নি।
গতকাল সকালে ঘর স্থাপন কে কেন্দ্র করে পূর্ব শত্রুতা জের ধরে অসহায় দরিদ্র ওই পরিবারের ঘরে ঢুকে ভাংচুর ও লুটপাট চালিয়ে ৫ জনকে কুপিয়ে পিটিয়ে হত্যার চেষ্টা চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ গ্রামবাসীর, এ বিষয়ে ধনবাড়ী থানায় অভিযোগ দায়ের করেন ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্য হৃদয়।
জানা যায়, হামলার পরে এলাকাবাসীর সহায়তায় আহতদের উদ্ধার করে ধনবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
প্রতিপক্ষের এ হামলার ঘটনায় আহতরা হলেন- মজিবুর রহমান( ৬৫), মর্জিনা বেগম( ৫০) ,রাশেদা(৪৫), মো: মিন্টু মিয়া (৪০), তাদের মধ্যে হৃদয়ের চাচাকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। অন্যরা ধনবাড়ী সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
ভুক্তভোগী পরিবার এর সদস্য হৃদয় বলেন, গতকাল সকাল আনুমানিক ১০:০০ ঘটিকার জমি নিয়ে পূর্ব শত্রুতার জেরে বলিভদ্র পশ্চিমবাড়া গ্রামের, ১) সরওয়ার্দী (৫০), ২) রাজ্জাক (৩৫), ৩) সফর উদ্দিন (৫৫) সর্ব পিতা: সাহেব আলী, ৪) সজিব (৩৫), ৫) সবুজ (৩০) উভয় পিতা: সরওয়ার্দী, ৬) হাফিজুর (২৫) পিতা: সফর উদ্দিন, ৭) চামেলী (৪০) স্বামী: রাজ্জাকসহ ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী বাহিনী দিয়ে পূর্বপরিকল্পিত ভাবে পেশি শক্তির জোরে , দা, বটি, শাবল, ছুরি, চাকু সহ দারালো দেশীয় অস্ত্র-সন্ত্র নিয়ে আমার বসতবাড়ীর জমি জবরদখল করার উদ্দেশ্যে অতর্কিতভাবে হামলা করে আমার পিতা-মাতা, বড় ভাই ও চাচা- চাচী’কে প্রাণে মেরে ফেলার উদ্দেশ্যে দা দিয়ে এলোপাথাড়ি কুপিয়েছে এবং আমার পিতার বাম হাতে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে। এসময় আমার পিতার ডাকে প্রতিবেশীরা এগিয়ে আসলে প্রতিবেশীদের বাধার সম্মুখে বিবাদীগন চলে যায় । আমি চাকুরী জনিত কারনে ঢাকায় থাকায় আমি প্রাণে বেঁচে যাই।
পরিবারের কর্তা মজিবুর রহমান বলেন, প্রতিপক্ষরা এখনো আমাদের হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। তারা প্রভাবশালী হওয়ায় কেউ কিছু বলতে পারছে না। এ অবস্থায় আমার পরিবার প্রাণ নাশের ঝুঁকিতে আছে। প্রশাসনের কাছে এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাইছি।
গ্রামের বাসিন্দা কামরুন্নাহার কাজলি বলেন, এরকম করে মানুষ মানুষকে মারে না, আমাদের পার্শ্ববর্তী গ্রাম পিকনা থেকে সন্ত্রাসী ভাড়া করে এনে এই অসহায় দরিদ্র পরিবারের উপর যে সন্ত্রাসী হামলা চালিয়েছে গ্রামবাসীর পক্ষ থেকে আমরা এর ন্যায্য বিচার চাই।
গ্রামের আরেক বাসিন্দা সুরাইয়া বেগম বলেন, সকাল বেলায় কান্নাকাটির আওয়াজ শুনে, ঘর থেকে বেরিয়ে দেখি রক্তাক্ত অবস্থায় কিছু লোক পড়ে আছে, দেখে আমি আশেপাশের লোকজনকে খবর দিই,তারা তাদেরকে হাসপাতালে পাঠায় ।
গ্রামের বাসিন্দারা বলেন, এই হতদরিদ্র লোক গ্রামে গ্রামে ভিক্ষা করে রোজগার করে খায়, তাদের উপর ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী দিয়ে অন্যায় ভাবে হামলা করা ঠিক হয়নি । আমরা গ্রামবাসী গ্রাম থেকে টাকা উঠিয়ে তাদেরকে চিকিৎসার জন্য দিয়েছি, গ্রামবাসী আমরা এর ন্যায্য বিচার চাই।
বিবাদী পরিবারের সাথে দেখা করতে গেলে বাড়ির সব ঘরেতালা লাগানো দেখা যায়, বাড়িতে গিয়ে ডাকাডাকি করলে এক ঘরে থেকে বিবাদীর ছেলে সজিব এর বউ সন্ধ্যা বেরিয়ে আসলে ঘটনা সম্পর্কে কিছু জানেনা বলে তিনি জানান।
ধনবাড়ী থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ হাবিবুর রহমান জানান, বিষয়টি আমি অবগত আছি এ বিষয়ে থানায় একটা অভিযোগ হয়েছে, অভিযোগের ভিত্তিতে আসামিকে ধরার প্রক্রিয়া চলছে আসামী যতই শক্তিশালী হোক না কেন তাদেরকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হবে।
গ্রামবাসী উল্লেখিত আসামীদেরকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনার আহ্বান জানান।