টাঙ্গাইলে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলা করে বেকায়দায় পড়েছেন বাদি মিতু পাল। এ মামলার আসামীদের গ্রেপ্তার না করে উল্টো বাদিকেই নানা ভাবে হুমকি দিচ্ছেন মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা টাঙ্গাইল সদর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) রুবেল।
পুলিশ বলছে, আসামী প্রকাশে ঘুরে বেড়াচ্ছেন যেমন ঠিক, তেমনি আসামী এই ঘটনার সাথে কোনভাবেই জড়িত নয়। তাই তাকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না। কেউ মামলা করলেই যে তাকে গ্রেপ্তার করতে হবে এমন নয়। তদন্তে জড়িত থাকলে তবেই তাকে গ্রেপ্তার করা হবে।
মামলা সূত্রে জানা যায়, টাঙ্গাইল শহরের পাতুলী পাড়া ভবানীপুর এলাকার সুকুমার পালের মেয়ে মিতু পালের সাথে ২০২১ সালের ১ ডিসেম্বর নরসিংদী জেলার ভেলানগর এলাকার মৃত স্বপন কুমার পালের ছেলে সন্দীপ পালের পালিবারিকভাবে বিয়ে হয়। বিয়ের সময় মেয়ের বাবা ছেলেকে সাড়ে ১৩ ভড়ি স্বর্ণালংকার এবং প্রায় দুই লাখ টাকার আসবাবপত্র যৌতুক হিসেবে প্রদান করেন।
বিয়ের কয়েকমাস পর সন্দীপ পালের চাকুরীর জন্য তিনিসহ তার পরিবারের লোকজন টাকার জন্য মিতুকে শারিরীক ও মানুষিক নির্যাতন শুরু করে। এক পর্যায়ে মিতুর পরিবার মেয়ের সুখের কথা চিন্তা করে তিন ধাপে ১৫ লাখ টাকা প্রদান করেন। কিন্তু টাকা পেয়েও চাকুরী না নেয়ায় এ নিয়ে কথাকাটাকাটি শুরু হয়। এক পর্যায়ে পুনরায় ১০ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করে সন্দীপের পরিবার। মিতু তার বাবা-মা’র কাছে বিষয়টি যানালে তারা ১০ লাখ টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানান।
পরে সন্দীপ পাল তার পরিবারের লোকজন মিতুকে শারিরীক ও মানসিক নির্যাতন করে বাবার বাড়ি টাঙ্গাইলে পাঠিয়ে দেন। পরবর্তীতে মিতুর বাবা সুকুমার পাল ২০২৫ সালের ২০ জুন মেয়ের জামাই সন্দীপ পাল, শ্বাশুড়ি আল্পনা পাল, ননদ সুরভী পাল ও মামা শ্বশুর টাঙ্গাইল শহরের পাঁচআনি বাজার (আনন্দময়ী চত্ত্বর) এলাকার অতুল কৃষ্ণ পালকে বাড়িতে আসার আমন্ত্রন জানান। তারা বাড়িতে আসার পর সুকুমার পাল আর কোন যৌতুক দিতে পারবেন না বলে সন্দীপকে জানিয়ে দেন এবং মেয়েকে তাদের বাড়িতে নিয়ে যেতে বলেন।
এসময় সন্দীপ পাল ১০ লাখ টাকা না দিলে মিতুকে নিয়ে আর সংসার করবেন না বলে জানিয়ে দেন। এ নিয়ে কথাকাটাকাটির এক পর্যায়ে সন্দীপ পালসহ তার স্বজনরা মিতুকে এলোপাথারি মারপিট শুরু করে। এক পর্যায়ে আশেপাশের লোকজন এগিয়ে এলে তারা পালিয়ে যায়। পরে আহত অবস্থায় মিতুকে উদ্ধার করে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
পরদিন ২১ জুন মিতু পাল বাদি হয়ে টাঙ্গাইল নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতে চারজনকে আসামী করে মামলা দায়ের করেন।
মামলায় আসামীরা হচ্ছেন, মিতুর স্বামী সন্দীপ পাল, শ্বাশুড়ী আল্পনা পাল, ননদ সুরভী পাল এবং মামা শ্বশুর অতুল কৃষ্ণ পাল।
এদিকে তদন্তকারী কর্মকর্তাকে আসামী ধরার বিষয়ে জানতে চাওয়ায় বাদি সহ তার পরিবারকে বিভিন্ন ভাবে হয়রানি করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন মিতুর পরিবার।
মামলাটি আদালত টাঙ্গাইল সদর থানাকে তদন্ত পূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের নির্দেশ দেন। পরে টাঙ্গাইল সদর থানা গত ১৬ জুলাই মামলাটি রুজু করে।
এদিকে মামলাটি রুজু হওয়ার পর এর তদন্তকারী কর্মকর্তা সদর থানার এসআই রুবেলের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। এই পুলিশ কর্মকর্তা বলছেন, এক থেকে তিন নম্বর আসামীর বাড়ি অন্য জেলায়। তারা পলাতক রয়েছে। তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। তবে চার নম্বর আসামী এ ঘটনায় জড়িত নয়। তিনি কোন অপরাধ করেননি। মামা শ্বশুর হয়ে কিভাবে তিনি এমন ঘটনা ঘটাতে পারে, এটা কোন ভাবেই সম্ভব নয়। তাই তাকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না। তিনি নিরঅরাধ।