মোঃ মুসা মিয়া: সোমবার (১১ নভেম্বর) টাঙ্গাইলে মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টদের ৬ দফা দাবি ও অবস্থান কর্মসূচী অনুষ্ঠিত হয়েছে। মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টরা টাঙ্গাইল মেডিকেল থেকে মিছিল নিয়ে টাঙ্গাইল সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সামনে এসে অবস্থান কর্মসূচী পালন করে। এরপর মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টদের এক দল প্রতিনিধি সিভিল সার্জন এর কাছে গিয়ে স্মারক লিপি প্রদান করে। সিভিল সার্জন স্মারক লিপি গ্রহন করে এবং তাদের সর্বাত্বক সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
৬ দফা দাবি গুলো হলো।
১. স্বতন্ত্র পরিদপ্তর গঠন করতে হবে।
ডিপ্লোমাধারীদের ১০ ম গ্রেড (২য় শ্রেণীর গেজেটেড) পদমর্যাদা প্রদান করে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নীতিমালা অনুযায়ী আনুপাতিক হারে পীর গেজেটেডক দ্রুত নিয়োগ এর ব্যবস্থা করতে হবে, পাশাপাশি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ২০১৩ সালের জনতকৃত নিয়োগ প্রক্রিয়া চালু করতে হবে।
৩. গ্র্যাজুয়েট মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্টদের নবম গ্রেডের পদসৃষ্টি পূর্বক চাকুরীজীবিদের আনুপাতিক হারে পদোন্নতির নিয়ম বহাল রেখে স্ট্যান্ডার্ড সেট—আপ ও নিয়োগবিধিতে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।
৪. ঢাকা আইএইচটি—কে “বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব মেডিকেল সায়েন্স এন্ড টেকনোলজি” নামকরণে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করতে হবে এবং উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য সকল আইএইচটিসমূহের জন্য মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্ট শিক্ষকদের স্বতন্ত্র ক্যারিয়ার প্লান গঠন করে বিদ্যমান নিয়োগ বিধি ও অসংগতিপূর্ণ গ্রেড সংশোধন করতে হবে।
৫. মেডিকেল টেকনোলজি কাউন্সিল গঠনের মাধ্যমে পেশাদার লাইসেন্স প্রদান, ডিপ্লোমা মেডিকেল এডুকেশন বোর্ড গঠন এবং প্রাইভেট সার্ভিস নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে।
৬. সকল অনুষদের বিএসসি, এমএসসি ও বি—ফার্ম কোর্স চালু করা এবং স্কলারশিপ সহ প্রশিক্ষণ ভাতা চালু করতে হবে।
শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য—
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় অনুমোদিত, সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পরিচালিত বিএসসি ইন মেডিকেল/হেলথ টেকনোলজি ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তর নিয়ন্ত্রণ বাংলাদেশ রাষ্ট্রীয় চিকিৎসা অনুষদ কর্তৃক পরিচালিত মেডিকেল টেকনোলজি বিভিন্ন অনুষদ ও বাংলাদেশ ফার্মেসী কাউন্সিল কর্তৃক পরিচালিত ডিপ্লোমা ইন ফার্মেসি শিক্ষার্থীদের সম্মিলিত আহবানে— ৬ দফা এ পেশার মুক্তির আলোকবর্তিকা যা রাষ্ট্রের সাধারণ জনগনের স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রীক আকাঙ্খা পূরণের জন্য অত্যাবশকীয় বলে বিশ্বাস করি। “জুলাই বিপ্লব” নামে ছাত্র— জনতার সম্মিলিত গণঅভ্যুত্থান, সকল শ্রেনী ও পেশার মানুষকে একটি বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার যে আশা সঞ্চার করেছে তাতে জনগণ তাদের অন্যসব অধিকারের পাশাপাশি উন্নত ও সর্বজনীন চিকিৎসা সেবা প্রাপ্তিরও স্বপ্ন দেখছেন। স্বাস্থ্যসেবাকে গণমুখী করতে চিকিৎসক, নার্স, মেডিকেল টেকনোলজিস্টসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মীদের পেশাগত সুরক্ষা ও অধিকার নিশ্চিত করা অপরিহার্য। স্বাস্থ্যসেবা একটি “টিম ওয়ার্ক” যেখানে চিকিৎসক, নার্স ও মেডিকেল টেকনোলজিস্টগন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রোগীদের সেবাদান কার্যক্রমের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টিই রোগ নির্ণয়, যার দায়িত্ব পালন করেন মেডিকেল টেকনোলজিস্টগণই অথচ বরাবরই গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখার পরও সংশ্লিষ্ট দপ্তরের বিমাতৃসুলভ মনোভাব ও সদিচ্ছার অভাবে নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত এ পেশা এবং রাষ্ট্র তা সংস্কারের উদ্যোগ নেয়নি। বৃহৎ এক পেশাজীবী মেডিকেল টেকনোলজিস্ট ও ফার্মাসিস্ট জনগোষ্টির পরিচালনা, বদলি, পদোন্নতি, পেশাগত কল্যাণ ও অন্যান্য দেখভালের জন্য কোন স্বতন্ত্র পরিদপ্তর নেই। যা নিতান্ত দুঃখজনক। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা গাইডলাইন অনুযায়ী ১ জন চিকিৎসকের বিপরীতে ৫ জন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট থাকার আবশ্যকতা থাকলেও সরকারি চাকরিতে কর্মরত মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের সংখ্যা মাত্র ৫ হাজারেরও কম অথচ তা হওয়ার কথা ছিল ৮০ হাজারেরও বেশি। এমনকি ডিপ্লোমা মেডিকেল টেকনোলজি শিক্ষার উচ্চশিক্ষা হিসেবে বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পরিচালিত বিএসসি ইন মেডিকেল/ হেলথ টেকনোলজি সনদধারী গ্র্যাজুয়েটদের জন্য অদ্যবধি কোন প্রকার পদসৃজন ও পদায়ন করা হয়নি। অতীব আশ্চর্যের বিষয়, সমশিক্ষাগত যোগ্যতায় ১৯৯৪ সালে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের, ২০১১ তে ডিপ্লোমা নার্স ও মিডওয়াইফদের এবং ২০১৮ সালে কৃষি ডিপ্লোমাধারীদের ১০ম গ্রেড বাস্তবায়িত হয়েছে কিন্তু মেডিকেল টেকনোলজিস্টদের ও ফার্মাসিস্টদের ক্ষেত্রে তা এখনও বাস্তবায়ন করা হয়নি।
চিকিৎসা সেবায় সরাসরি জড়িত থাকার পরও উদ্দেশ্যর প্রণোদিতভাবে, এ জনগোষ্ঠীকে সরকারি বিধিমালায় ‘নন— চিকিৎসা সেবামরা রাসবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। ইনস্টিটিউট অফ হেলথ টেকনোলজি (আইএইচটি) গুলোর বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থায় তীব্র সংকট চলছে, বিষয়ভিত্তিক দক্ষ মেডিকেল টেকনোলজিস্ট শিক্ষকদের অভাবে শিক্ষার মান ক্ষতিগ্রস্ত অচ্ছে। সমস্যা সমাধানে ঢাকা আইএইচটি কে বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তর করা এবং অন্যান্য আইএইচটি গুলোকে কলেজ পর্যায়ে উন্নীত করার প্রস্তাব বার বার দেয়া হয়েছে কিন্তু কোন প্রকার উদ্যোগ গ্রহন করা হয়নি।