টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে রাস্তা নিয়ে জন দুর্ভোগের সংবাদ প্রকাশ করায় সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলাসহ হুমকি দিয়ে আসছে প্রভাবশালী একটি মহল। মামলা দিয়েই তিনি ক্ষান্ত হননি সাংবাদিককে নানাভাবে হুমকি দেয় যেখানে পাবে মেরে ঠ্যাং ভেঙে দিবে। এ ঘটনায় কালিহাতীর সাংবাদিক নেতারা তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে।
জানাগেছে, উপজেলার এলেঙ্গা পৌরসভার ৬নং ওয়ার্ডের শতাধিক পরিবারের যাতায়াতের রাস্তা বন্ধ করে রেখেছে একটি পরিবার। ইতোপুর্বে এই রাস্তাটি নিয়ে স্থানীয় ব্যক্তিবর্গ একাধিকবার শালিস এবং রাস্তা নির্মাণের নিমিত্তে এলেঙ্গা পৌরসভা ও জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করে। সেই প্রেক্ষিতে আনন্দ টিভির বিশেষ প্রতিনিধি (টাঙ্গাইল) সংবাদ প্রকাশ করে। সংবাদে বিক্ষুব্দ হয়ে এলেঙ্গা পৌরসভাধীন আবু বক্কর সিদ্দিকীর ছেলে আলহাজ মো. লেবু মিয়া বাদি হয়ে আদালতে ৫ কোটি টাকার মানহানির মামলা দায়ের করেন। পাশাপাশি ওই সাংবাদিককে নানা ভাবে হুমকি প্রদান করে আসছে ওই লেবু মিয়া।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ইতোপুর্বে এলেঙ্গা পৌরসভার সাবেক মেয়র নুর-এ আলম সিদ্দিকী সাধারণ মানুষের ভোগান্তি লাঘব করতে রাস্তাটি নির্মাণের উদ্যোগ নেয়। কিন্ত লেবু মিয়া স্থানীয় সাবেক সংসদ সদস্য হাছান ইমাম খান সোহেল হাজারীর আস্থাভাজন হওয়ায় প্রভাব খাটিয়ে রাস্তার কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়। এতে বিপাকে পড়ে যায় শতাধিক পরিবার। রাস্তা না থাকায় কোমলমতি শিশুরা সঠিক সময়ে স্কুলে যেতে পারেনা। নারীরা বাসা থেকে ঠিকঠাক বের হতে পারেনা এবং মানুষ মৃত্যুবরণ করলে দাফন করতে টিন কেটে লাশের খাটিয়া বের করতে হয়। এছাড়াও সামান্য বৃষ্টি হলে বিকল্প পায়ে হাটার রাস্তাটিও পিচ্ছিল হওয়ায় শিশুরা চরম ভোগান্তিতে পড়ে।
স্থানীয়রা জানায়, এই রাস্তাটি না থাকায় শতাধিক পরিবারের ১ হাজার মানুষকে ভোগান্তি পোহাতে হয়। ভোগান্তির কথা ভেবে আশপাশে সকলেই জায়গা ছেড়ে দেয়ার সম্মতি থাকলেও শুধু মাত্র লেবু রাস্তার জন্য জায়গাটি ছেড়ে দেননি। এ কারণে এই রাস্তাটি আজও হয়নি। তারা আরও জানায় সামান্য একটু জায়গা ছেড়ে দিতে সম্মতি না হওয়ায় সাবেক মেয়র ক্ষিপ্ত হয়ে লেবুকে চর মেরে ছিলো সকলের সামনে। কি কারণে জায়গা ছেড়ে দেয়না এক প্রশ্নের জবাবে তারা জানায় মো. লেবু একজন অসামাজিক লোক। সমাজে তার সাথে কেউ চলতে পারেনা, তার সাথে প্রভাবশালী এক নেতার সখ্যতা থাকায় সে নিজেকে অনেক বড় কিছু মনে করে। এছাড়াও ওই নেতার প্রভাবে লেবু সমাজের অনেক নীরহ মানুষের উপর নির্যাতন করে।
চানু বেগম,সাইফুল ইসলাম, ফরিদা আক্তার, আরিফ হোসেন,মজিদ মিয়া ও শাজাহান মিয়াসহ একাধিক ভুক্তভোগী জানায়,আমরা পৌরসভায় বসবাস করলেও রাস্তাটি না থাকায় মনে হয় কোন এক বস্তিতে বসবাস করছি। বাজারঘাট ছাড়া ভারী কোন প্রয়োজনীয় জিনিস ক্রয় করে বাসায় নিতে পারি না। চাউলের বস্তা কিনলে মাথায় করে নিতে হয়। বাসার কাজের জন্য রড সিমেন্ট নিতে পারিনা, বাড়তি টাকা দিয়ে শ্রমিক দিয়ে বাসায় নিতে হয়।
সবচেয়ে দুঃখের বিষয় হলো ছেলে-মেয়ে বিয়ের জন্য সমন্ধ আসলে শুধু মাত্র রাস্তা না থাকায় বিয়ে ভেঙে যায়। এমন পরিস্থিতিতে কালিহাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও জেলা প্রশাসক বরাবর আবেদন করেছি।
আনন্দ টিভির বিশেষ প্রতিনিধি(টাঙ্গাইল) মেহেদী হাসান মৃদুল বলেন, সম্প্রতি একটি লাশের খাটিয়া টিন কেটে বের হওয়ার দৃশ্য দেখে তিনি আবেগপ্লাবিত হয়। এরপর তিনি জন দুর্ভোগ লাগবে একটি প্রতিবেদন তৈরি করেন। প্রচার হওয়ার ১ মাস পর তিনি শুনতে পান তার নামে ৫ কোটি টাকার মানহানীর মামলা হয়েছে।
মামলার বাদী মো. লেবু মিয়ার কাছে মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।
এ বিষয়ে কালিহাতী সহকারী কমিশনার(ভুমি) সিফাত বিন সাদেক জানান, বিষয়টি তিনি জানেন। এ নিয়ে ভুক্তভোগীরা একটি আবেদন করেছেন। সেই আবেদনের প্রেক্ষিতে পৌরসভার বিধান অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।