নদীমাতৃক বাংলাদেশে কৃষিপ্রধান অঞ্চল টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলার মাঝে বয়ে চলা; বৈরাণ নদ ও ঝিনাই নদী পূর্ব, পশ্চিম বিভক্ত করে রেখেছিল শতাব্দীর পর শতাব্দী জুড়ে। বিভক্তির কারণে গোপালপুরের পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থা ছিল ভঙ্গুর।
উপজেলা সদরে পৌঁছাতে বর্ষা মৌসুমে ভরসা ছিল নৌকা। শুকনো মৌসুমে গোপালপুর হাটে যেতে কৃষকরা পাট, ধান ও অন্যান্য কৃষি পণ্য মাথায় নিয়ে পায়ে হেঁটে, গরুর গাড়ি, ঘোড়ার গাড়ি বা মহিষের গাড়ির উপর নির্ভর করতো। সেসময় থানা সংলগ্ন, বাজার কালিমন্দির সংলগ্ন নদীর প্রবল স্রোতে এবং রাতের বেলা খেয়া ঘাটে চরম ভোগান্তি পোহাতো। বর্তমান প্রজন্ম গোপালপুরের যোগাযোগ ব্যবস্থা দেখে হয়তোবা সেসময়ের দুর্ভোগ আন্দাজ করতেই পারবেনা। ১৯৯১ সালে বিএনপি সরকার গঠন করলে, ১৯৯৩ সালে বৈরাণ নদের উপর গোপালপুর থানা সংলগ্ন সেতু উদ্বোধনের মাধ্যমে। গোপালপুরে উন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার গোড়াপত্তন করেন তৎকালীন জাতীয় সংসদ সদস্য আব্দুস সালাম পিন্টু। গোপালপুরের পশ্চিমাঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থার অভুতপূর্ব পরিবর্তন হয় ।
বিলুপ্তি ঘটে গরুর গাড়ি, ঘোড়ার গাড়ি বা মহিষের গাড়ির জনপ্রিয়তা পায়ে চালানো ভ্যান, রিকসা এবং টেম্পু। এছাড়াও গোপালপুর থেকে আলমনগর ইউনিয়নে যেতে খেয়া ঘাটের বিড়ম্বনা ছিল সুতী বলাটায়, হেমনগর ইউনিয়নে যেতে নবগ্রামে,হাদিরা ইউনিয়নে যেতে পলশিয়া, ঝাওয়াইল ইউনিয়নে যেতে ঝাওয়াইল ও ভেঙ্গুলায়। ১৯৯৩ সালে সুতি বলাটা সেতু,ঝিনাই নদীর উপর ১৯৯৬ সালে নবগ্রাম সেতু, ১৯৯৭সালে ঝাওয়াইল বেইলি ব্রিজ ও ভেঙ্গুলা হাট সংলগ্ন সেতু, ২০০৩সালে পলশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ সেতু নির্মিত হলে। খেয়া ঘাটের ভোগান্তির বিলুপ্তি ঘটে। পর্যায়ক্রমে প্রতিটি রাস্তা পাকাকরণ হলে গোপালপুর উপজেলার যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিপ্লব সাধিত হয়। তবে বর্তমানে পোড়াবাড়ী-তারাকান্দি আঞ্চলিক মহাসড়কে পুনঃ নির্মাণের জন্য ঝাওয়াইল বেইলি ব্রিজটি ভেঙ্গে ফেলায়, দীর্ঘদিনেও কাজ সম্পন্ন না হওয়া সারাদেশ থেকে ২০১ গম্বুজ মসজিদে আসা পর্যটকদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
নগদাশিমলা ইউপির সাবেক চেয়ারম্যান মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, তৎকালীন এমপি আব্দুস সালাম পিন্টুর হাত ধরে গোপালপুর থানা ব্রীজ নির্মাণের পর, রোডস এন্ড হাইওয়ের অধীনে গোপালপুর-ঝাওয়াইল এবং নগদাশিমলার রাস্তা পাকাকরণ করা হলে। বৈরাণ নদের পশ্চিমাঞ্চলে যোগাযোগ ব্যবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তন হয়। এছাড়া গোপালপুর থেকে ভুঞাপুর, মধুপুর, ধনবাড়ী এবং তারাকান্দি সংযোগ সড়ক তার দ্বারাই নির্মিত হয়।