টাঙ্গাইলের মধুপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে কথিত হামলার ঘটনায় সাবেক কৃষিমন্ত্রীসহ ১১৭ জনের নামে করা আলোচিত মামলার বাদী জাহিদ হাসান নামে এক যুবককে মামলা বাণিজ্যের নামে চাঁদাবাজির অভিযোগে স্থানীয়রা গণধোলাই দিয়ে পুলিশে দিয়েছেন।
গত শুক্রবার (২৫ অক্টোবর) রাত ১১টার দিকে পৌর এলাকার কাঁঠালতলী মোড়ের পূর্বে শেওড়াতলায় এমন ঘটনা ঘটে। পুলিশ শনিবার জাহিদকে ১৫১ ধারায় আটক দেখিয়ে আদালতে পাঠিয়েছে। জাহিদ মধুপুর পৌর এলাকার মালাউড়ী গ্রামের জনৈক ছানোয়ার হোসেনের ছেলে।স্থানীয়রা জানান, শুক্রবার রাত প্রায় ১১টার দিকে জাহিদ এলাকায় এসে এক দোকানির কাছে নিজেকে ডিবি পুলিশের পরিচয় দেন।
বৈদ্যুতিক যন্ত্রে শরীরে শর্ট দিয়ে ভয় দেখান এবং মামলার ভয় দেখিয়ে চাঁদা দাবি করেন। সন্দেহ হলে এলাকার লোকজন তাকে চ্যালেঞ্জ করেন। এতে তার জারিজুরি ফাঁস হয়ে যায়। এ সময় স্থানীয়রা তাকে উত্তম-মধ্যম দেন।ব্যবসায়ী নেতা এবং মধুপুর শিল্প ও বণিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মিনজুর রহমান নান্নু জানান, খবর পেয়ে শুক্রবার রাত ১১টার দিকে ঘটনাস্থলে গিয়ে রহস্য জেনে বিক্ষুব্দ জনতার হাত থেকে ওই যুবককে রক্ষা করে পুলিশ ডেকে তাদের হাতে তুলে দেয়া হয়।
মধুপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রাসেল আহমেদ ঘটনার সত্যতা রিশ্চিত করে জানান, ১৫১ ধারায় আটক দেখিয়ে তাকে শনিবার আদলাতে সোপর্দ করা হয়েছে।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, জাহিদুল ইসলাম জাহিদ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত হয়েছেন দাবি করে গত ২৫ সেপ্টেম্বর বাদী হয়ে সাবেক কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক, সাবেক দুই উপজেলা চেয়ারম্যান ছরোয়ার আলম খান আবু, ই্য়াকুব আলী এব্ং সাবেক দুই মেয়র মাসুদ পারভেজ, সিদ্দিক হোসেন খানসহ ১১৭ জনের নাম উল্লেখসহ আরো ৩০০-৪০০ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে কোর্টে মামলার আবেদন করেন।
তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত মধুপুর থানাকে এফআইআর গ্রহণের আদেশ দেয়।অভিযোগ উঠেছে, ওই মামলাকে পুঁজি করে তিনি বিভিন্ন আসামির কাছে চাঁদা দাবি শুরু করেন। চাঁদা নিয়ে আসামির জামিন আদায়ের মৌখিক চুক্তি করে কয়েকজনকে জামিন পাইয়ে দেন। মামলা নিয়ে তার এমন বাণিজ্য করার খবর এলাকায় লোকের মুখে মুখে আলোচনা চলছে শুরু থেকেই। মামলার ভিত্তি নিয়েও আছে ধোঁয়াশা। তার মামলায় উল্লেখ আছে, গত ৪ আগস্ট তিনি মধুপুর সমন্বয়কদের ডাকা কর্মসূচিতে অংশ নিয়ে হামলার শিকার হন।
ওই দিন আন্দোলনে অংশ নেয়া কর্মীরা জানান, জাহিদ মামলায় যে স্থান থেকে মিছিলে যোগদান করার কথা বলেছেন এবং যে স্থানে আহত হওয়ার কথা বলেছেন সেটা সম্পুর্ণ মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন। গত ৪ আগস্ট দুটি স্থানে ছাত্র-জনতার অবস্থান কর্মসূচি ঘোষিত হয়। প্রথম স্থান মধুপুর শহীদ স্মৃতি কলেজ এবং দ্বিতীয় স্থান মধুপুর রাণী ভবানী মডেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে। মামলায় উল্লিখিত হাসপাতালের সামনে তাদের কোনো অবস্থান ছিল না। ওই এলাকা আওয়ামী লীগের দখলে ছিল। অথচ আওয়ামী লীগের দখলে থাকা স্থানে জাহিদ হামলার শিকার হয়েছেন বলে মামলার বর্ণনা।
অন্যদিকে আন্দোলনকারীরা দাবি করেছেন, জাহিদ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে আহত হয়েছেন এমন কোনো তথ্য উপজেলা প্রশাসন, থানা, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং যারা আন্দোনের সাথে যুক্ত ছিলেন তাদের কারো কাছেই নেই। নিজেকে সমন্বয়ক পরিচয় দিলেও এলাকার আন্দোলনকারীদের কেউ জাহিদকে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া তো দূরের কথা, অংশ নিতেও দেখেছেন কিনা সন্দেহ।তারা জানান, জাহিদ মধুপুর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেউ নন। তার মামলা ও চাঁদাবাজির অভিযোগ তাদের বিব্রত করছে।
তার এই কাজটি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের চেতনার পরিপন্থী। এ বিষয়ে শিগগিরই সংবাদ সম্মেলন করে তারা তাদের অবস্থান পরিষ্কার করার কথাও জানিয়েছেন। সে পর্যন্ত মধুপুর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকারীদের সম্পর্কে বিভ্রান্তি না ছড়ানো বা বিভ্রান্তিকর তথ্যে কা না দেয়ার জন্য সবাইকে অনুরোধ করেছেন তারা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক পরিচয় বা আমাদের কারো নাম ভাঙিয়ে কেউ কারো কাছ থেকে অর্থ বা অন্য কোনো সুবিধা নিতে চাইলে তাকে ধরে পুলিশে সোপর্দ করার অনুরোধও করছেন তারা।