টাঙ্গাইলের সখীপুরে একটি গ্রামের আনাচে-কানাচে গড়ে উঠেছে চোলাই মদের কারখানা। ওইগ্রামের ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর কোচ সম্প্রদায়ের বেশ কিছু লোক নিজেদের বসতবাড়িতে এসব মদ তৈরিকরেন। শুধুমাত্র নিজেরা সেবনের কথা বলে তৈরি করলেও গোপনে প্রতিমাসে বিপুল পরিমাণ মদ জেলা-উপজেলার বিভিন্ন প্রান্তের মাদকাসক্তের কাছে বিক্রি হচ্ছে। এটি উপজেলার বহেড়াতৈল ইউনিয়নেরধোপারচালা গ্রামের চিত্র।
সম্প্রতি ওই গ্রামের কয়েকজন সচেতন যুবক এ প্রতিনিধির কাছে নিজগ্রামের মাদকের ভয়াবহতার এমন চিত্র বর্ণনা করেছেন।তাঁরা অভিযোগ করে আরও জানান, হাতের কাছে মাদক পেয়ে গ্রামের উঠতি বয়সের যুবকেরাপ্রতিনিয়ত আসক্ত হয়ে পড়ছে। ইতোমধ্যেই মাদকাসক্ত হয়ে গ্রামের বেশ কয়েকজন যুবক আত্মহত্যাওকরেছে। অনেক পরিবার লোক-লজ্জার ভয়ে তা প্রকাশ করতে পারছে না। নীরব যন্ত্রণায় দুর্বিসহ জীবন পারকরছে পরিবারগুলো। এ নিয়ে গত এক যুগেরও বেশি সময় ধরে প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরে মৌখিক ও লিখিতঅভিযোগ দিয়েও কোনো প্রতিকার পায়নি গ্রামবাসী।ধোপারচালা গ্রামের স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরেই এই গ্রামেরক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর কোচ সম্প্রদায়ের ২০-২৫টি পরিবার চোলাই মদ তৈরি করে আসছে।
এসব মদ নিজেরা পানকরার পাশাপাশি নিয়মিত বাজারজাত করা হয়। প্রতি রাতে শতাধিক লিটার পরিমাণ চোলাই মদ দেশেরবিভিন্ন অঞ্চলে পাচার হচ্ছে। এলাকার কোচ সম্প্রদায়ের কয়েকটি সচ্ছল পরিবার মদ তৈরি ও বিক্রির সঙ্গেওতপ্রোতভাবে জড়িত বলেও জানিয়েছে স্থানীয়রা।বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মাদকাসক্তরা এসে এলাকায় অপরাধ করে যাচ্ছে। তাদের দ্বারা গ্রামের স্কুল-কলেজ পড়ুয়াছাত্রীরা যৌন হয়রানি ও ইভটিজিংয়ের শিকারও হয়। গত কয়েক বছরে মাদক প্রতিরোধে স্থানীয় মসজিদ ওমন্দির কমিটির সমন্বয়ে সভা-সমাবেশ হয়েছে, কিন্তু এতে কোনো লাভ হয়নি। এখনও অবাধে চলছে মদতৈরি-বিক্রি।জোবায়ের শিকদার নামের স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, মাদকের ছড়াছড়িতে এলাকায় বসবাস করা কঠিনহয়ে পড়েছে।
গ্রামজুড়ে মদ তৈরির কারখানা থাকায় বিভিন্ন মহলে নিজ এলাকার পরিচয় দিতেও লজ্জালাগে। কেউ কেউ আমাদেরও মাদকাসক্ত মনে করেন।ওই এলাকার বাসিন্দা ও উপজেলা আদিবাসী ট্রাইবাল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি সুরেশচন্দ্র কোচ বলেন, কয়েক দিন পরপরই এলাকায় বিভিন্ন অসামাজিক কার্যকলাপ চোখে পড়ছে। তাইসাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রাখতে মাদক বন্ধ করা সবার জন্যই প্রয়োজন হয়ে দাঁড়িয়েছে।এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় ইউপি সদস্য হুসাইন মাহমুদ এরশাদ বলেন, মূলত কোচ সম্প্রদায়েরলোকজন বংশগতভাবেই মদ তৈরি করে নিজেরা সেবন করেন। কিন্তু কিছু পরিবার ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যেও মদতৈরি ও বিক্রির সঙ্গে জড়িত। এতে এলাকার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে।নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী সম্প্রদায়ের এক সদস্য জানান, পূজা-পার্বণ, বিয়ের অনুষ্ঠান ওসম্প্রদায়ের কেউ মারা গেলে শ্মশানে যাওয়ার আগে আমাদের মদ্যপানের নিয়ম রয়েছে। কেউ কেউ এইসুযোগে ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে মদ তৈরি ও বিক্রি করেন।
প্রশাসনের চাপে এসব এখন প্রায় বন্ধ হয়েগেছে।সখীপুর থানার উপপরিদর্শক (সেকেন্ড অফিসার) মাসুদ রানা বলেন, গত কয়েক মাসে ওই এলাকায় পুলিশঅভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ চোলাই মদ ও উপকরণ ধ্বংস করেছে। সম্প্রতি অভিযানে কিছুটাস্থবিরতা আসায় মদ তৈরি পুনরায় শুরু হয়ে থাকতে পারে। তবে এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয়ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।