আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় টাঙ্গাইলে চলতি বছর পাটের আবাদ বেশি হয়েছে। চলতি মৌসুমে ১৯ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে ২ লাখ ৩০ হাজার ৬৯০ বেল পাট উৎপাদন হবে। চলতি বছরের পাট আবাদের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছিল ১৯ হাজার ৬’শ হেক্টর। লক্ষমাত্রার চেয়ে ৫০ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ বেশি হয়েছে। ভালো দামে সোনালি আঁশ আর রুপালি কাঠি বিক্রি হওয়ায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটেছে।
অন্যদিকে পাটের ভাল দাম পেতে শতভাগ পলিথিনের বস্তা পরিহারের পাশাপাশি দেশের সকল পাটকল চালু ও বিদেশে রপ্তানির উদ্যোগ নেয়ার দাবি জােিয়ছেন পাট চাষিরা।
এবার পাট ও পাটশোলার বাজার দরও ভালো। মণ প্রতি পাট সাড়ে তিন হাজার থেকে ৪ হাজার টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। পাটের আঁশ বিক্রি করে যেমন কৃষক টাকা পাচ্ছে, তেমনি পাটের কাঠি জ্বালানি আর ঘরের বেড়া দেওয়ার কাজে ব্যবহার করা যাচ্ছে।
টাঙ্গাইলের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, দাম ভাল পাওয়ায় জেলায় প্রতিবছরই বাড়ছে সোনালী আঁশ চাষ। গত ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে ১৯ হাজার ২০ হেক্টর জমিতে ২ লাখ ৫২ হাজার ৫৫৮ বেল উৎপাদন হয়েছে। চলতি মৌসুমে ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে ১৯ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে ২ লাখ ৩০ হাজার ৬৯০ বেল পাট উৎপাদন হবে। চলতি বছরের পাট আবাদের লক্ষমাত্রা ধরা হয়েছিল ১৯ হাজার ৬’শ হেক্টর। লক্ষমাত্রার চেয়ে ৫০ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ বেশি হয়েছে। চলতি বছর জেলায় ৬ হাজার ২’শ জন কৃষককে এক কেজি করে পাটের বীজ বিনামূল্যে দেয়া হয়েছে।
সরেজমিন দেখা গেছে, জেলার ১২টি উপজেলায়ই পাটের আবাদ হয়েছে। জাগ দেওয়া পাটের আঁশ ছাড়াতে ব্যস্ত এখন চাষিরা। বেশিরভাগ জমির পাটই কাটা শেষ হয়েছে।
এর অধিকাংশই জাগ দেওয়াও হয়ে গেছে। অনেকে পাট থেকে আঁশ ছাড়াচ্ছেন। কেউ বা পাটশোলার আঁটি বেঁধে রৌদ্রে শুকাচ্ছেন। কেউ আবার পাট ভাঁজ করে রৌদ্রে মেলে দিচ্ছেন।
পাট চাষিরা জানায়, দেশি, তোষা, কেনাফ, রবি-১ ও ভারতীয় বঙ্গবীর জাতের পাট সব থেকে বেশি আবাদ হয় এ জেলায়। কৃষি অফিস থেকে প্রায় প্রতিবছর পাটের বীজ ও সার বিনামূল্যে দেয়া হয়, তবে ওই বীজ গুলো সময় মতো আমাদের কাছে পৌঁছায় না। যার কারণে পাটের আবাদ ব্যাহত হয়। সময় মতো পাট বীজ হাতে পেলে আবাদ অনেক অংশে বৃদ্ধি পাবে।
প্রথম দিকে বৃষ্টিপাতের অভাবে পাট আবাদ করতে সমস্যা হলেও মৌসুমের শেষ দিকে এসে পর্যাপ্ত বৃষ্টি হওয়ায় পাটের আবাদ বৃদ্ধি পেয়েছে।
এছাড়া নিবিড় পরিচর্যা আর পাট ও কৃষি অফিসের পরামর্শের কারণে পাট আবাদে তেমন কোনো রোগবালাই দেখা দেয়নি। বাজারে এবার পাটের বাজার দাম ভালো হওয়ায় কৃষকদের মুখে হাসি ফুটেছে বলে জানায় তারা।
টাঙ্গাইল সদর উপজেলার পয়লা গ্রামের পাট চাষি মো. দেলোয়ার হোসেন বলেন, এবার ২৫ শতাংশ জমিতে পাটের আবাদ করেছি। এতে প্রায় ৬ মণ পাট পাবো। পাটের আবাদ ভালো হয়েছে। মণ প্রতি পাট বিক্রি হচ্ছে সাড়ে তিন হাজার থেকে চার হাজার টাকা দরে। এছাড়া একশ আটির বোঝা পাটকাঠি বিক্রি হচ্ছে এক হাজার টাকায়।
তিনি বলেন, ২৫ শতাংশ জমিতে ১৫টা শ্রমিক লেগেছে। যার প্রতি শ্রমিকের মজুরী ৫’শ টাকা।
দেলদুয়ার উপজেলার দেউলী ইউনিয়নের আগ দেউলী গ্রামের কৃষক আনোয়ার হোসেন বলেন, এবছর আমি ৪ বিঘা জমিতে পাট আবাদ করেছি। প্রতি বিঘায় সাত মণ ফলন হয়েছে। ৪ বিঘা জমির পাট ৩৪০০ টাকা মন হারে বিক্রি করে ৯৫ হাজার টাকা পেয়েছি। ৪ বিঘা জমির পাট আবাদ করতে আমার খরচ হয়েছে ৪০ হাজার টাকা। এতে আমার প্রায় ৫৫ হাজার টাকার উপরে লাভ হয়েছে।
কৃষক ছানোয়ার হোসেন বলেন, আমি ১০ শতাংশ জমি বর্গা নিয়ে পাট চাষ করেছিলাম। এতে তিন মণ পাট পেয়েছিলাম। প্রথমে যে বাছ পাট পেয়েছিলাম সেগুলো ২৪০০ টাকা মণ দরে বিক্রি করেছি। পরের পাট ৩৮০০ টাকা মণ বিক্রি করেছি।
আগ দেউলী গ্রামের কৃষক রমজান বলেন, পাট আবাদের প্রথম দিকে বৃষ্টি না থাকায় সেচ দিয়ে পাট বপণ করি। সে পাট গুলো বীজ বপন করেছিলাম সেগুলো চার হাজার টাকা মণ বিক্রি করেছি। পওে কিছু পাট ৩৪০০-৩৫০০ টাকা মণ বিক্রি করেছি। আরও কিছু পাট কাটা বাকি রয়েছে আমার। পাটের ফলন আর দামে আমরা অনেক খুশি।
দেলদুয়ার উপজেলার ছিলিমপুর হাটের পাট ব্যবসায়ী মনিরুল ইসলাম বলেন, আমরা স্থানীয় কৃষকদের কাছ থেকে পাট কিনে বাংলাদেশের বিভিন্ন মিল পার্টির কাছে বিক্রি করি। এছাড়া প্রতি শুক্রবার ছিলিমপুর হাটে কৃষকদের কাছ থেকে পাট কেনা হয়। হাটের দিনে প্রায় ৫’শ থেকে ৬’শ মণ পাট কেনাবেচা হয়। এ বছর ৩৫০০-৩৮০০ টাকা মণ দরে পাট কিনছি। মণে ৮০-১০০ টাকা দরে লাভ করে বিভিন্ন মিল পার্টির কাছে আমরা বিক্রি করে থাকি।
পাট অধিদপ্তর থেকে চলতি বছর জেলার ১২টি উপজেলার ৩৬ হাজার কৃষককে এক কেজি পাট বীজ ও ১২ কেজি করে সার বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়াও তালিকাভুক্ত ৯’শ জন কৃষককে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা পাট উন্নয়ন কর্মকর্তা ওয়াহিদুজ্জামান খান।
এ বিষয়ে টাঙ্গাইলের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের জেলা প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা দুলাল উদ্দিন জানান, পাটের দাম বেড়ে যাওয়ায় পাট চাষে ঝুঁকেছে কৃষক। পাট চাষ করে কৃষক এখন লাভবান হচ্ছেন। কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে। পাট চাষিদের সুদিন ফিরেছে বলে দাবি করেন তিনি।