টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে নবনির্মাণাধীন বাইপাস সড়ক নির্মাণকাজে বেপরোয়া অনিয়ম ও নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইসমাইল হোসেন কনস্ট্রাকশন-এর বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ঠিকাদারি লাইসেন্স ব্যবহার করা হলেও প্রকৃতপক্ষে কাজটি পরিচালনা করছেন এমআরটি কোম্পানির আব্দুল আজিজ। এতে প্রকল্পের কাজের মান নিয়ন্ত্রণে চরম অবহেলা ও স্বচ্ছতার অভাব দেখা দিয়েছে।
সরেজমিনে পরিদর্শনে দেখা যায়, সড়কের সাব-বেস নির্মাণে ব্যবহার করা হচ্ছে নিম্নমানের ইট, ইটের টুকরা ও অনুপযুক্ত নির্মাণসামগ্রী। স্থানীয়দের আশঙ্কা, প্রায় অর্ধশত কোটি টাকার এই প্রকল্পটি এভাবে নির্মিত হলে কয়েক বছরের মধ্যেই সড়কটি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
স্থানীয় বাসিন্দা শিপন, জাহিদ ও রায়হানসহ একাধিক ব্যক্তি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “আমরা দীর্ঘদিন ধরে একটি টেকসই বাইপাস সড়কের অপেক্ষায় ছিলাম। কিন্তু যেভাবে নিম্নমানের ইট ব্যবহার করা হচ্ছে, তাতে দু-এক বছরের মধ্যেই রাস্তা ভেঙে পড়বে। এত বড় বাজেটের কাজ হলেও কোনো মান নিয়ন্ত্রণ চোখে পড়ছে না।”
আরেক স্থানীয় বাসিন্দা তন্ময় চকদার বলেন, “কয়েকদিন আগেই নিম্নমানের উপকরণ ব্যবহারের কারণে একটি কালভার্ট ভেঙে পড়ে। পরে তা নতুন করে নির্মাণ করা হয়। কিন্তু এখনো একইভাবে নিম্নমানের ইট ব্যবহার করে সাব-বেসের কাজ চলছে। দেখার যেন কেউ নেই।”

তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ইসমাইল হোসেন কনস্ট্রাকশন-এর নিয়োগপ্রাপ্ত ম্যানেজার শফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, “আমরা এক নম্বর মানের ইট ব্যবহার করছি এবং সরকারি বিধি-বিধান মেনেই কাজ পরিচালনা করা হচ্ছে। অভিযোগগুলো ভিত্তিহীন।”
এদিকে প্রকল্পের কাজ তদারককারী হিসেবে পরিচিত এমআরটি কোম্পানির আব্দুল আজিজ-এর সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার কোনো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে টাঙ্গাইল জেলা সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী ড. সিনথিয়া আজমিরী খান-এর মুঠোফোনে একাধিকবার কল দেওয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, ভূঞাপুর লিংক সড়ক নির্মাণ প্রকল্পের প্রস্তাব ইতোমধ্যে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হয়েছে। বাহাদীপুর রেল ক্রসিং থেকে বিরহাটি রেল ক্রসিং পর্যন্ত ১ দশমিক ৮০ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৪৯ কোটি ৭১ লাখ টাকা।
প্রকল্পের আওতায় রয়েছে, ৬ দশমিক ৭৫ একর ভূমি অধিগ্রহণ, ৬৯ মিটার পিসি গার্ডার সেতু নির্মাণ, ১২ মিটার আরসিসি বক্স কালভার্ট, ১ দশমিক ৬১ লাখ ঘনমিটার মাটি ভরাট, ১৫০ মিটার স্লোপ প্রটেকশন, ১৩০ মিটার আরসিসি ওয়াল, ১২৫ মিটার প্যালাসাইডিংসহ প্রয়োজনীয় ট্রাফিক সাইন ও গাইড পোস্ট স্থাপন।
স্থানীয়দের দাবি, দ্রুত সঠিক তদন্ত ও কার্যকর নজরদারি না হলে সরকারি অর্থের অপচয় হওয়ার পাশাপাশি গুরুত্বপূর্ণ এই সড়ক প্রকল্পের স্থায়িত্ব নিয়ে বড় ধরনের শঙ্কা তৈরি হবে।











