সারা বছরই সবজি পাওয়া যায় বাজারে। তবুও শীতকালকে বলা হয় সবজির মৌসুম। শীতকালীন সবজির প্রতি মানুষের আগ্রহও থাকে বেশি। প্রকৃতিতে শীতকাল আসি আসি করছে আর এরই মধ্যে বাজারে আসতে শুরু করেছে শীতকালীন সবজি। সারা বছর পাওয়া যায় এমন সবজির পাশাপাশি এখন কাঁচা টমেটো, শালগম, পেঁয়াজ পাতা, মুলা, শিমের মতো সবজিও জায়গা করে নিচ্ছে বাজারে। ফুলকপি, বাঁধাকপি, গাজর, লাউ, টমেটো শীতকালীন সবজি হলেও এখন সারা বছরই বাজারে পাওয়া যায়। তবে ক্রেতারা বলেন, সারা বছর পাওয়া গেলেও শীতে এগুলোর স্বাদই থাকে ভিন্ন, যেহেতু এগুলো শীতের সবজি।
মুলা, শিমের মতো শীতকালীন সবজি বাজারে এসেছে আরও বেশ কিছুদিন আগে। এখন আসতে শুরু করেছে শালগম, পেঁয়াজ পাতা, কাঁচা টমেটোর মতো সবজিগুলো। বাজারে এসেছে ঠিকই, কিন্তু এগুলো বিক্রি হচ্ছে চড়া মূল্যে। বিক্রেতারা বলছেন নতুন এসেছে বলেই এগুলোর দাম বেশি। কয়েকদিন গেলেই দাম কমতে শুরু করবে। তবে বেশি দামেই অনেক ক্রেতাকে কিনতে দেখা যায় এসব সবজি। তাদের ভাষ্য, নতুন সবজি এসেছে বাজারে, টেস্ট না নিলে কিভাবে হয়।
শুক্রবার (১০ নভেম্বর) মিরপুর ১ নম্বরের কাঁচা বাজার সরেজমিন ঘুরে দেখা যায় শীতের সবজির এই চিত্র।
আজ বাজারে শীতকালীন সবজি ছাড়া অন্যান্য সব সবজির দামই রয়েছে নিম্নমুখী। বিক্রেতারা বলছেন, সব সবজির দামই কমেছে। আরও হয়তো কমে যাবে।
শিম ৮০- ৯০ টাকা, শালগম ৬০-৭০ টাকা, কাঁচা টমেটো ৯০- ১২০ টাকা, টমেটো ১৪০ টাকা, পেঁয়াজ পাতা ১২০-১৬০ টাকা, মুলা ৬০ টাকা, গাজর ১২০ টাকা, লম্বা বেগুন ৬০ টাকা, সাদা গোল বেগুন ৬০ টাকা, কালো গোল বেগুন ১০০ টাকা, শসা ৬০- ৮০ টাকা, করল্লা ৮০ টাকা, উচ্ছে ৮০ টাকা, পেপে ৪০ টাকা, পটল ৬০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৬০ টাকা , ঢেঁড়স ৭০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, ধুন্দল ৬০ টাকা, বরবটি ৮০ টাকা, কচুর লতি ৬০ টাকা, কচুরমুখী ৮০ টাকা, কাঁচা মরিচ ১৬০ টাকা, ধনেপাতা ১৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতিটি লাউ ৭০ টাকা, ফুলকপি ৪০-৫০ টাকা, বাঁধাকপি ৬০ টাকা ও চাল কুমড়া ৬০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে।
সবজি বিক্রেতা রাজিব বলেন, বাজারে শীতকালীন সবজি আসাতে অন্যান্য সবজির দাম কমে গিয়েছে। কয়েকদিন পর আরও কমে যাবে।
শীতকালীন সবজির দাম বেশি নিয়ে আরেক বিক্রেতা মো. শামসুল বলেন, নতুন উঠেছে বলেই শীতকালের সবজির দাম এখন একটু বেশি। কয়দিন পরেই কমে যাবে। শিম যখন বের হইছে তখন ২৫০ টাকা করেও বিক্রি করেছি। এখন তো ১০০ টাকার মধ্যে চলে আসছে। এরকম সব সবজির দামই কমে যাবে।
এদিকে শীতের সময়ের সবজির দাম বাড়তি থাকাতেও অনেককে কিনতে দেখা যায় এসব সবজি। তাদের মতে নতুন সবজির স্বাদই আলাদা।
রায়হান নামের বেসরকারি চাকরিজীবী এক ব্যক্তি এসেছিলেন বাজার করতে। তিনি কিনেছেন কাঁচা টমেটো, শিম, ফুলকপি। তিনি বলেন, সারা বছর তো একই রকম সবজি খাই, এখন যখন নতুন সবজি এসেছে তাই নতুন সবজি নিয়ে যাচ্ছি।
দাম বেশি নিয়ে তিনি বলেন, আমরা সবাই জানি যে, কোনও একটা সবজি নতুন আসলে প্রথম সেটার দাম একটু বেশিই থাকে। তাই এগুলোর দাম এখন বেশি। কয়েকদিন পরেই দাম কমে যাবে বলে আমি মনে করি।
স্কুল শিক্ষিকা তাসলিমা আক্তার এসেছিলেন বাজার করতে। তিনি বলেন, এখন তো ফুলকপি, বাঁধাকপি, লাউ প্রায় সারা বছরই পাওয়া যায়। কিন্তু শীতকালেই এগুলোর আসল স্বাদ পাওয়া যায়। তাই এখন এগুলো নিয়ে যাচ্ছি।
আমদানির খবরে কিছুটা কমেছে আলুর দাম। কিন্তু পেঁয়াজ এখনও সেঞ্চুরিয়ান। একশো টাকার নিচে কোনও পেঁয়াজ নেই।
আজ বাজারে মানভেদে দেশি পেঁয়াজ ১৩০ টাকা, ক্রস জাতের পেঁয়াজ ১৩০ টাকা, ভারতীয় পেঁয়াজ ১০০ টাকা, লাল ও সাদা আলু ৫০ টাকা দরে বিক্রি করতে দেখা যায়। কিন্তু সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতি কেজি পেঁয়াজের সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ৬৪ থেকে ৬৫ টাকা। আলু কেজিতে ভোক্তা পর্যায়ে ৩৫/৩৬ টাকা ও কোল্ড স্টোরেজ থেকে ২৬/২৭ টাকা হওয়ার কথা। কিন্তু আলু-পেঁয়াজ আমদানির পরও সরকার এই দামে আলু-পেঁয়াজ দিতে পারেনি ভোক্তাদের। এছাড়া আজ ভারতীয় আদা ২২০ টাকা, দেশি রসুন ২০০ টাকা, চায়না রসুন ১৮০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
আলু-পেঁয়াজ বিক্রেতা শরীফ বলেন, আলুর দাম কিছুটা কমেছে। তবে আর বেশি কমবে বলে মনে হয় না। পেঁয়াজের দামও কমবে না।
ভারত থেকে আসা আলুর মান নিয়ে অভিযোগ তুলে শরীফ বলেন, আমদানি করা আলু রেখেছিলাম দোকানে। কিন্তু সেগুলো ভালো না। বেশিরভাগ আলুই কাটা থাকে। কাস্টমার নিতে চায় না। তাই এখন আর রাখি না।
এছাড়া আজ ইলিশ মাছ ১৮০০ টাকা, রুই মাছ ৩৬০-৫৫০ টাকা, কাতল মাছ ৩৫০-৫৫০ টাকা, কালিবাউশ ৪০০-৬০০ টাকা, চিংড়ি মাছ ৮০০ -১৪০০ টাকা, কাঁচকি মাছ ৫০০-৬০০ টাকা, কৈ মাছ ৩৫০-১০০০ টাকা, পাবদা মাছ ৬০০ টাকা, শিং মাছ ৫০০-৬০০ টাকা, বেলে মাছ ৬০০-১০০০ টাকা, টেংরা মাছ ৭০০-১০০০ টাকা, কাজলি মাছ ৮০০ টাকা, বোয়াল মাছ ১০০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
ব্রয়লার মুরগি ১৬৫-১৯০ টাকা, কক মুরগি ২৭০-২৮০ টাকা, লেয়ার মুরগি ২৮০ টাকা, দেশি মুরগি ৫৫০ টাকা, গরুর মাংস ৭৫০-৭৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া প্রতি ডজন লাল ডিম ১২০ টাকা, সাদা ডিম ১১৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ডিম বিক্রেতারা বলছে দ্রুতই দাম আরও কমে যাবে।
বাজারে বেড়েছে সব রকম ডালের দাম। আজ ছোট মুসরের ডাল ১৪০ টাকা, মোটা মুসরের ডাল ১১৫ টাকা, মুগ ডাল ১৪৫ টাকা, খেশারি ডাল ৯৫ টাকা, বুটের ডাল ৯০ টাকা, ছোলা ৯০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এক্ষেত্রে দেখা যায়, সব রকম ডালের দাম বেড়েছে ৫ টাকা থেকে ১০ টাকা। এছাড়া অন্যান্য পণ্যের দাম রয়েছে আগের মতোই। প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৭৫ টাকা, চিনি ১৩৫ টাকা, দুই কেজি প্যাকেট ময়দা ১৪০ টাকা, আটা দুই কেজির প্যাকেট ১২০ টাকা, খোলা সরিষার তেল প্রতি লিটার ২২৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।