বিএনপিকে নিয়ে সুপরিকল্পিত চক্রান্ত চলছে এমন মন্তব্য করে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ১/১১ এর মতো বিএনপিকে লক্ষ্য করে ক্যাম্পেইন শুরু হয়েছে, বিএনপির অবদানকে খাটো করার পরিকল্পিত ক্যাম্পেইন চলছে। এগুলো অন্যায় হচ্ছে, ঠিক নয়। সেজন্য বিএনপির নির্বাচনের দাবি নিয়ে দেওয়া বক্তব্যের সমালোচনা করা হচ্ছে।
বুধবার দুপুরে গুলশানে বিএনপির রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি। তিনি বলেন, বিএনপি ১৫ বছরে সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত হয়েছে, খালেদা জিয়া ৬ বছর কারাভোগ করেছেন। অনেকে নিহত, গুম, মামলার শিকার। গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য যৌক্তিক সময় অবশ্যই বিএনপি অন্তর্বর্তী সরকারকে দেবে জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি নির্বাচনের কথা বলে এসেছে, সেজন্য এত দিন আন্দোলন হয়েছে, সেজন্য এটা বলবে বিএনপি।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ওয়ান ইলেভেন বিরাজনীতিকরণের চক্রান্ত হয়েছে, তখন দলকে বাতিলের চেষ্টা চলেছে। এখন সেই শংকাও রয়েছে। এজন্য বলা হয়েছে যারা গত সরকারকে সহায়তা করেছে, গণতন্ত্রের বিপক্ষে গেছে তাদের সরকারে দেখতে চায় না। জনগণের মাঝে যেন বিভাজনের সৃষ্টি না হয় সেদিকটি বিবেচনায় নিতে সকল রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান। বন্যার কারণে পহেলা সেপ্টেম্বর বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর ৬ দিনের ঘোষিত কর্মসূচি বাতিল করে সব টাকা বন্যার্তদের ত্রাণ সহায়তায় দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর দিন পতাকা উত্তোলন, জিয়ার মাজারে শ্রদ্ধা ও বিকেলে দোয়া অনুষ্ঠিত হবে।
তিনি বলেন, সাম্প্রতিক বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। ভারত বাঁধ খুলে দেওয়ার আগে সতর্ক করেনি, যার কারণে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে, ২৭ জনের প্রাণহানি ঘটেছে, অনেক ক্ষতিগ্রস্ত। কিছু কিছু জায়গায় দুর্বৃত্তরা অপকর্ম করে বিএনপির ওপর দায় চাপানোর চেষ্টা চলছে অভিযোগ করে বিএনপি-মহাসচিব বলেন, এর প্রতিবাদ জানাচ্ছি। কোনো দুর্বৃত্তায়নের সঙ্গে বিএনপি জড়িত না, বিএনপি খুব কঠোর অবস্থানে রয়েছে। বিগত সরকারের সহযোগীদের বিরুদ্ধে ঢালাও মামলা চলছে দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, এই মামলা নেওয়ার আগে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যাচাই করা উচিত। ঢালাও মামলা একেবারে বন্ধ হওয়া দরকার। এমন কোনো মামলা দেবেন না, যার সারবত্তা থাকবে না। যেখানে জড়িত সেভাবেই মামলা দিন। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে বিপ্লবকে নস্যাৎ করার চক্রান্ত চলছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ক্রান্তিকাল পার করছি, স্থিতিশীল অবস্থাকে ব্যাহত করার চক্রান্ত চলছে। এটা করা যাবে না। অন্তর্বর্তী সরকারকে সহযোগিতা করতে হবে। নেতাকর্মীদের অহেতুক মামলা দেওয়া থেকে বিরত থাকুন। সংস্কার করে নির্বাচনের দিকে যাওয়ার অন্তর্বর্তী সরকারের লক্ষ্য নস্যাৎ করার চক্রান্ত চলছে। যৌক্তিক সময় নির্ধারণের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসতে আবারও সরকারের প্রতি জোর আহ্বান জানান মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, বিএনপি কোনো রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধের পক্ষে নয়। যে কেউ রাজনীতি করার অধিকার রাখে। দেশের স্বাধীনতায় যারা বিশ্বাস করে না তাদের পক্ষে নই, এছাড়া সবার রাজনীতি করার অধিকার আছে।
মির্জা ফখরুল আরও বলেন, কিছু কিছু নতুন মানুষ এখন সামনে আসছে, তাদের উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দেহ হয়, সেজন্য সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান। বাংলাদেশের বড় ব্যবসায়ীরা মনে করে যত দ্রুত সম্ভব একটা নির্বাচিত সরকার দরকার। অন্তর্বর্তী সরকারে প্রয়োজন আরও গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের অন্তর্ভুক্ত করে কাজকে এগিয়ে নিতে হবে। এ সময় স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, কঠিন সময় চলছে, এখন যে কেউ নানা দাবি নিয়ে আন্দোলনে সরব হচ্ছে। তবে অন্তর্বর্তী সরকারকে সময় দেওয়া দরকার, এখনি এভাবে আন্দোলন গ্রহণযোগ্য নয়। নির্বাচনের মাধ্যমে নতুন সরকার আসা পর্যন্ত সময় দেওয়া দরকার। মূল কাজ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা, সেটার জন্য প্রয়োজন নির্বাচন। সেটার জন্য সময় দেওয়া দরকার।