সাধারণত শীতের কাপড় বিক্রির বাজার জমে ওঠে নভেম্বর মাসে। তবে এবার এখনও ব্যবসা জমেনি।
শীত পড়ার আশায় ব্যবসায়ীরা। খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন, শীতের গরম কাপড়ের ব্যবসা মূলত হয় নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে। শীত বাড়েনি বলে, গরম কাপড়ের বিক্রিও বাড়েনি। এছাড়া বিক্রি কম হওয়ার পিছনে অন্যতম কারণ হচ্ছে রাজনৈতিক কর্মসূচি হরতাল-অবরোধের প্রভাব।
সোমবার রাজধানীর মিরপুর ১ নম্বর ও মিরপুর ১০ নম্বর গোল চত্বর ও মিরপুর ১১ নম্বর এলাকা ঘুরে এমন চিত্র দেখা যায়।
শীতের কাপড়ের দরদাম
শীতের গরম কাপড়ের বাজারে বিক্রি হচ্ছে কম্বল, জ্যাকেট-সোয়েটারের, মাফলার ও কানটুপি। এবার বাজারে কম্বল, জ্যাকেট, সোয়েটারের মতো পোশাকের দাম এবার একটু বেশি। মান ও আকারভেদে প্রতিটি জ্যাকেট ও সোয়েটারের দাম ২০০ থেকে ২ হাজার টাকা। একটি দেশি কম্বল বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ৭৫০ টাকায়। আর বিদেশি কম্বলের দাম ৮০০ টাকা থেকে আট হাজার টাকা।
এছাড়াও কানটুপি ও মাফলার বিক্রি হচ্ছে ফুটপাতে। এখানে কানটুপি কিনতে লাগছে ১০০ থেকে ৩০০ টাকা। মাফলার বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকা থেকে শুরু করে মান ভেদে ৫০০ টাকা পর্যন্ত।
সরেজমিন দেখা গেছে, মিরপুর-১ নম্বর বাস স্ট্যান্ড সড়কের পাশে, বৈশাখী সুপার মার্কেটের সামনে ও ১০ নম্বর গোল চত্বরে বিক্রি হচ্ছে শীতের গরম কাপড়। তবে সেখানে নেই ক্রেতাদের ভিড়। এখানে বিক্রি হচ্ছে শিশু থেকে শুরু করে বয়স্ক মানুষের শীতের কাপড়। মিলছে চাহিদা ও সামর্থ্য অনুযায়ী সব ধরনেরই গরম কাপড়।
মিরপুর-১ নম্বর বাসস্ট্যান্ডে ফুটওভার ব্রিজের সামনে শীতের কাপড় বিক্রেতা মো. সাইফুল বলেন, শীতের কাপড়ের বেচাকেনা এখন অনেক কম। টুকটাক বিক্রি হচ্ছে। রাজধানীতে এখনো শীত পড়েনি তাই বিক্রিও কম।
কেন বিক্রি কম জানতে চাইলে সাইফুল বলেন, শীতের সিজনে প্রতিদিন বিক্রি করতাম ৮-১০ হাজার টাকা। সারাদিনে এখন বিক্রি হয় ২-৩ হাজার টাকা। আবার সব দিন একরকম বিক্রিও হয় না। হরতাল-অবরোধের কারণে বেচাকেনা অনেক কম।
মিরপুর এক নম্বর বৈশাখী সুপার মার্কেটের সামনের ফুটপাতের গরম কাপড় বিক্রেতা মো. জাকির বলেন, এখনো শীতের বেচাকেনা শুরুই হয়নি। ঢাকায় শীত আসেনি বলে, গরম কাপড় বিক্রি হচ্ছে না।
তিনি বলেন, হরতাল-অবরোধের কারণে বেচাকেনা কম হচ্ছে। দূরদূরান্ত থেকে মিরপুর চিড়িয়াখানা এলাকায় মানুষ ঘুরতে এলে এসব পোশাক কিনে নেন। কিন্তু হরতাল- অবরোধ কারণে মানুষ তেমন আসছে না। এ কারণে আমাদের বিক্রিও বাড়ছে না। পাড়া-মোল্লার মানুষ আর কতই আর কেনাকাটা করবে। আমাদের পণ্য বিক্রির বেশিরভাগ ক্রেতা এখানকার ঘুরতে আসা মানুষরাই।
মুক্তবাংলা শপিং কমপ্লেক্সের সামনে শীতবস্ত্র বিক্রেতা মো. শাকিল বলেন, শীত না পড়ায় ঢাকায় একটু বেচাকেনা কম। বিক্রি কম হওয়ার পেছনে অন্যতম কারণ হচ্ছে হরতাল-অবরোধ।
মিরপুর ১০ নম্বর গোল চত্বর ফায়ার সার্ভিসের সামনের ফুটপাতে গরম কাপড় বিক্রেতা মো. সুমন বলেন, এখনো বেচাকেনা জমে ওঠেনি শীতও পড়েনি। অনেক মানুষ এখন ভোট আর নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত।
একই স্থানের শীতের কাপড় বিক্রেতা মো. মাসুম হোসেন বলেন, শীতের কাপড় মূলত আমরা বিক্রি শুরু করে থাকি বছরের নভেম্বর মাসে। আজকে নভেম্বর মাসের ২৭ তারিখ। এখন পর্যন্ত ভালোভাবে শীতের কাপড় বিক্রি করতে পারিনি। বিগত বছরগুলোতে নভেম্বর মাসে প্রায় প্রতিদিনই শীতের কাপড় বিক্রি করতাম এখানে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকার।
হরতাল-অবরোধের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এখন সারাদিনে বিক্রি করি তিন থেকে চার হাজার টাকা।
মিরপুর ১১ নম্বরের কম্বল বিক্রেতা মো. মকবুল বলেন, দেশি-বিদেশি প্রতিটি কম্বলের দাম বেড়েছে ১০০ থেকে ২০০ টাকা। একটি দেশি কম্বল বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ৭৫০ টাকায়। আর বিদেশি কম্বলের দাম ৮০০ টাকা থেকে আট হাজার।
তিনি বলেন, কাপড় ও মজুরি বাবদ খরচ বেড়েছে। যার কারণে পণ্যের দামও বেড়েছে। পুরোপুরি শীত ঢাকায় না পড়ায় কম্বল বিক্রিও অনেক কম।