প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিএনপি নির্বাচন চায় না। তারা অস্বাভাবিক পরিস্থিতি তৈরি করতে চায়। বিএনপি একটি সন্ত্রাসী সংগঠন। সন্ত্রাসীদের কীভাবে শিক্ষা দিতে হবে, সেই শিক্ষাটাই আমাদের এখন দেওয়া উচিত। সেটাই আমরা দেব। তাদের জন্য দেশটা ধ্বংস হোক, এটা সহ্য করা যাবে না।’ সম্প্রতি বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে ‘গ্লোবাল গেটওয়ে ফোরাম’ সম্মেলনে অংশ নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সেই অভিজ্ঞতা জানাতে আজ মঙ্গলবার ণভবনে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা করা হয়। সেখানে প্রধানমন্ত্রী প্রশ্নোত্তরে এসব কথা বলেন।
২৮ অক্টোবর শনিবার বিএনপির মহাসমাবেশকে কেন্দ্র করে রাজধানীতে ব্যাপক সহিংসতা হয়। এতে পুলিশসহ দুজন মারা যান। এ ছাড়া পরদিন ২৯ অক্টোবর বিএনপির ডাকা হরতালে বেশ কিছু বাস পোড়ানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে এসব নিয়ে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। বিএনপির সাম্প্রতিক কর্মসূচি নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০১৩–১৪ সালেও বিএনপি একই কাজ করেছিল। তাদের মধ্যে মনুষত্ব নেই। তাদের স্বভাব বদলাবে না। অবৈধভাবে অস্ত্র হাতে ক্ষমতা দখলকারীর হাতে তাদের জন্ম। এসব হামলার নিন্দা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদের সব কর্মকাণ্ড রেকর্ড করা আছে।
যাঁদের বাস পুড়েছে, তাদের সহযোগিতা করা হবে বলে জানান প্রধানমন্ত্রী। শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি–জামায়াত যে সন্ত্রাসী দল, তারা আবারও প্রমাণ করল। এটা আদালত প্রমাণ করেছে। বিদেশে কয়েকজন আশ্রয় চাইতে গিয়ে পায়নি। সন্ত্রাসী দল হিসেবে প্রত্যাখ্যান করেছে। মাঝখানে তারা কিছু কর্মসূচি পালন করেছে। সরকার কোনো বাধা দেয়নি। তারা যখন সুষ্ঠুভাবে রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন করেছে, তখন তাদের প্রতি মানুষের আস্থা তৈরি হতে শুরু করেছিল। কিন্তু ২৮ তারিখে বিএনপি পুলিশকে হত্যা করল, সাংবাদিকদের ওপর হামলা করল। এই ঘটনার পর জনগণের ধিক্কার ছাড়া আর কিছু জুটবে না। হাসপাতালে ঢুকে অ্যাম্বুলেন্স পুড়িয়েছে তারা। প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ইসরায়েল যেভাবে ফিলিস্তিনের হাসপাতালে হামলা করছে, এর সঙ্গে বিএপির তফাত নেই। নিজেরাই পালিয়ে গিয়ে অবরোধের ডাক। কিসের অবরোধ? কার জন্য অবরোধ? তাদের কাজটাই হচ্ছে বাংলাদেশের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করা। ২৮ তারিখের কর্ণফুলী টানেল যেদিন উদ্বোধন হচ্ছে, সেদিন মানুষ খুন করছে, হামলা করছে। তাদের হামলার লক্ষ্য হচ্ছে পুলিশ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সাংবাদিক। যুবলীগের একজনকে হত্যা করেছে।
সাংবাদিকদের ওপর হামলার প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সাংবাদিকদের ওপর তারা যে হঠাৎ চড়াও হলো, আমি তো বুঝতে পারলাম না। সাংবাদিকরা তো তাদের পক্ষেই নিউজ দিচ্ছিল, টক শোতে ভালো ভালো কথা, সরকারের দোষটাই বেশি দেখে। সাংবাদিকদের ওপর তাদের এত রাগ কেন, বুঝতে পারলাম না।’ পোশাকশ্রমিকদের আন্দোলন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ক্ষমতায় আসার পর থেকে গত ১৪ বছরে তিন দফা মজুরি বাড়ানো হয়েছে। পোশাকশ্রমিকদের জন্য তাঁর সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘এবার শ্রম মন্ত্রণালয় কমিটি করে দিয়েছে, আলোচনা চলছে। যেখানে কথা ছিল ডিসেম্বরে মজুরি বিষয়ে ব্যবস্থা নেবে। আলোচনার পর্যায়ে হঠাৎ তাদের মাঠে নামানো এবং জ্বালাও–পোড়াও করা, কারখানায় আগুন দেওয়া। যে কারখানা দিয়ে রুটি–রুজি আসে, সেটা ধ্বংস করলে চাকরি থাকবে কীভাবে? গ্রামে চলে যেতে হবে। এর মধ্যে দুজনের জীবন চলে গেছে, যা দুঃখনজনক। এসব কাজ থেকে বিরত থাকা উচিত।’ মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কথিত উপদেষ্টা মিয়া আরেফিকে গত শনিবার বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সঙ্গে করে নিয়ে যান লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) হাসান সারওয়ার্দী। সারওয়ার্দীর ব্যাপারে কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে জানতে চাইলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তাঁকে ছাড়া হবে না। ইতিমধ্যে নির্দেশ দিয়েছি, গ্রেপ্তার করা হবে। তাঁকে খোঁজ করা হচ্ছে। তাঁকে ঠিকই ধরা হবে এবং জিজ্ঞাসা করা হবে, সে কেন এ রকম ফ্রড করল।’
মিয়া আরেফি ও পিটার হাস প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সে মার্কিন নাগরিক (মিয়া আরেফি), এটা মার্কিনিদের দেখতে হবে। তারা আমাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়, তারা সন্ত্রাসবাদ দমন করে তাদের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়। এখন তো হাতেনাতে প্রমাণ কারা নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করছে। এখন নিষেধাজ্ঞা না দিয়ে এখন আবার ডায়লগ করার অনুরোধ করে। তাদের নীতি নিয়েই তো প্রশ্ন আছে।