খ্যাতিমান লেখক, গবেষক, বুদ্ধিজীবী ও বামপন্থি রাজনীতিবিদ বদরুদ্দীন উমর আর নেই। রোববার (৭ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টা ৫ মিনিটে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।
শেষকৃত্য ও জানাজা আগামীকাল সোমবার (৮ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টায় শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য তার মরদেহ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে রাখা হবে। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদে জানাজা শেষে জুরাইন কবরস্থানে বাবা-মায়ের কবরের পাশে দাফন করা হবে। অসুস্থতা ও চিকিৎসা বদরুদ্দীন উমর দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত জটিলতায় ভুগছিলেন।
সর্বশেষ গত ২২ জুলাই শ্বাসকষ্ট ও নিম্ন রক্তচাপ নিয়ে গুলশানের একটি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। ১০ দিন চিকিৎসা শেষে কিছুটা সুস্থ হয়ে বাসায় ফিরলেও রবিবার সকালে তার শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটে। জীবনী ১৯৩১ সালের ২০ ডিসেম্বর তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের বর্ধমান শহরে জন্মগ্রহণ করেন বদরুদ্দীন উমর।
তার পিতা ছিলেন আবুল হাশিম ও মাতা মাহমুদা আখতার মেহেরবানু বেগম। ১৯৫০ সালে পরিবারসহ ঢাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। তিনি ১৯৫৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক সম্মান এবং ১৯৫৫ সালে দর্শনে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। পরবর্তীতে ১৯৬১ সালে যুক্তরাজ্যের অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শন, রাজনীতি ও অর্থনীতিতে (PPE) ডিগ্রি লাভ করেন।
কর্মজীবন ও রাজনীতি প্রথমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন। ১৯৬৩ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে শিক্ষকতা শুরু করে ১৯৬৮ সাল পর্যন্ত সেখানে কর্মরত ছিলেন। এরপর তিনি বামপন্থি রাজনীতিতে সক্রিয় হন। বাংলাদেশ কৃষক ফেডারেশনের সভাপতি, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী জোটের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী এবং পূর্ববাংলার কমিউনিস্ট পার্টির গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন। সর্বশেষ ২০০৩ সালে তিনি জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল প্রতিষ্ঠা করেন।
সাহিত্যকর্ম ও অবদান বদরুদ্দীন উমর ছিলেন prolifically লেখক। তার উল্লেখযোগ্য বইয়ের মধ্যে রয়েছে – পূর্ব বাঙলার ভাষা আন্দোলন ও তৎকালীন রাজনীতি, সংস্কৃতির সংকট, সাংস্কৃতিক সাম্প্রদায়িকতা, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ও উনিশ শতকের বাঙালি সমাজ, বাংলাদেশে কমিউনিস্ট আন্দোলনের সমস্যা, যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশ প্রভৃতি।
রাজনীতি, দর্শন ও ইতিহাস নিয়ে তিনি ৬০টিরও বেশি গ্রন্থ রচনা করেছেন। স্বাধীনতা পুরস্কার প্রত্যাখ্যান ২০২4 সালে বদরুদ্দীন উমরকে শিক্ষা ও গবেষণায় অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ স্বাধীনতা পুরস্কার প্রদান করার ঘোষণা দেওয়া হলেও তিনি তা গ্রহণে অস্বীকৃতি জানান। তার ভাষায়— “১৯৭৩ সাল থেকে বিভিন্ন সংস্থা আমাকে পুরস্কার দিতে চেয়েছে। আমি কোনো পুরস্কার গ্রহণ করিনি। এবারও স্বাধীনতা পুরস্কার নেওয়া সম্ভব নয়।”