মির্জাপুরে শহীদ ভবানী প্রসাদ সাহা সরকারি কলেজের বিভিন্ন প্রজাতির ২১টি গাছ নিয়মবহির্ভূতভাবে নামমাত্র মূল্যে বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। কলেজ ক্যাম্পাসে লিফলেট বিতরণের মাধ্যমে গত ২৫ সেপ্টেম্বর শুধু বাবা-ছেলের অংশগ্রহণে উন্মুক্ত নিলামে গাছগুলো বিক্রি করা হয়েছে।
নিলামে অংশগ্রহণ করে কালাম এন্টারপ্রাইজ, মেহেদী হাসান আকাশ এন্টারপ্রাইজ ও খালিদ হাসান বাপ্পি এন্টারপ্রাইজ নামে তিনটি প্রতিষ্ঠান। কলেজের অধ্যক্ষ ও টেন্ডার কমিটির সঙ্গে সমন্বয় করে আবুল কালাম আজাদ ও তাঁর দুই ছেলে আকাশ এবং বাপ্পির নামে দরপত্র জমা দেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, শহীদ ভবানী প্রসাদ সাহা সরকারি কলেজের প্রায় তিন যুগের বেশি বয়সী ১৫টি মেহগনি, তিনটি আকাশমণি, দুটি নিম ও একটি লিচু গাছ বিক্রির জন্য তিন সদস্যের কমিটি করা হয়। কলেজের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের প্রধান নুরুল ইসলাম মিয়াকে প্রধান করে হাফিজুর রহমান ও সমাজকর্ম বিভাগের প্রভাষক আবু তারেককে সদস্য করা হয়। কমিটির সদস্যরা বন বিভাগের সঙ্গে সমন্বয় করে গাছগুলো বিক্রির জন্য এক লাখ ৩০ হাজার ৭৩০ টাকা সরকারি মূল্য নির্ধারণ করেন। কমিটি গোপনে গত ২২ সেপ্টেম্বর নিলাম বিক্রির নোটিশে ২৫ সেপ্টেম্বর গাছগুলো বিক্রির জন্য দিন ধার্য করে। নির্ধারিত সময়ে দরপত্র আহ্বানকারী বাবা ও দুই ছেলে ছাড়া আর কোনো ব্যবসায়ী উপস্থিত ছিলেন না। সরকারি মূল্যের চেয়ে মাত্র এক হাজার ২৭০ টাকা বেশি দামে আবুল কালাম আজাদের কাছে গাছগুলো বিক্রি করা হয়। শনিবার দুপুরে কলেজ ক্যাম্পাসে গিয়ে দেখা যায়, শ্রমিকরা গাছগুলো কেটে নিচ্ছেন। তারা গত পাঁচ দিন ধরে গাছগুলো কাটছে বলে জানান শ্রমিক জাবেদ।
স্থানীয় কযেকজন ব্যবসায়ী অভিযোগ করেন, কোনো ধরনের প্রচার না করে কলেজ কর্তৃপক্ষ নামমাত্র মূল্যে গাছগুলো বিক্রি করেছে। গাছগুলোর দাম চার থেক পাঁচ লাখ টাকা হবে।
কমিটির সদস্য প্রভাষক হাফিজুর রহমান জানান, শিক্ষকদের গাছ বিক্রির কাজ না। গাছ সম্পর্কে তাদের ধারণা নেই। অংশগ্রহণকারী তিনজন দরপত্রদাতা বাবা-ছেলে সম্পর্কের বিষয়ে তাদের জানা ছিল না। তবে সদরে ও দেওহাটা এলাকায় মাইকিং করা হয়েছিল। তারা টেন্ডার পক্রিয়া সম্পন্ন করেছেন। গাছ বিক্রি করেছেন অধ্যক্ষ।
সর্বোচ্চ দরদাতা আবুল কালাম আজাদের ভাষ্য, তিনি এক লাখ ৩২ হাজার টাকায় গাছগুলো ক্রয় করেছেন। নিলামে অংশগ্রহণকারী বাকি দুজনের সঙ্গে আপনার সম্পর্ক কী? এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাকি দুজন তাঁর ছেলে।
মির্জাপুর বাজারের ব্যবসায়ী বিপ্লব কুমার সাহা বলেন, ‘কলেজের এতগুলো গাজ কিভাবে বিক্রি হলো আমার জানি না। কোনো মাইকিং শুনিনি বা কোনো বিজ্ঞপ্তি দেখিনি।’
আরেক ব্যবসায়ী আব্দুল আলীম জানান, এর আগে কলেজ কর্তৃপক্ষ একটি গাছ বিক্রি করলেও তাঁকে জানানো হতো। কিন্তু এই ২১টি গাছ কিভাবে টেন্ডার দিয়ে বিক্রি হলো জানতে পারলেন না।
টেন্ডার কমিটির আহ্বায়ক নুরুল ইসলাম বলেন, কলেজের প্রধান ফটকের সামনে নোটিশ টাঙানো হয়েছিল। কলেজে লিফলেট বিলি করা হয়। মাইকিং করা হয়েছিল কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, করা হয়নি।
শহীদ ভবানী প্রসাদ সাহা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ ওছমান গনি জানান, গাছ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য নির্দেশনা ছিল। এ জন্য সময়ও দেওয়া হয়েছিল। উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে সর্বোচ্চ দরদাতার কাছে গাছগুলো বিক্রি করা হয়েছে।
মির্জাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এ বি এম আরিফুল ইসলামের ভাষ্য, গাছ বিক্রির বিষয়ে কলেজ কর্তৃপক্ষ তাঁকে জানায়নি।