দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি জানাতে বৃহস্পতিবার (৯ নভেম্বর) বঙ্গভবনে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। ভোটের তারিখসহ তফসিলের বিস্তারিত প্রস্তুতির বিষয়ে অবহিত করতে ওই দিন দুপুর ১২টায় বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন কমিশন।
সাক্ষাতের বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের সচিব মো. জাহাংগীর আলম বুধবার (৮ নভেম্বর) গণমাধ্যমকে বলেন, ‘রেওয়াজ অনুযায়ী তফসিল ঘোষণার আগে কমিশন রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। এর ধারাবাহিকতায় বৃহস্পতিবার এ সাক্ষাতের সূচি রয়েছে।’তিনি জানান, স্বাক্ষাতে রাষ্ট্রপতিকে নির্বাচন প্রস্তুতি সংক্রান্ত সব ধরনের অগ্রগতি বিষয়ে অবহিত করা হবে। প্রস্তুতি নিয়ে রাষ্ট্রপতির পরামর্শ ও নির্দেশনা থাকলে তা কমিশন শুনবে।সংবিধান অনুযায়ী, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্বাচন আয়োজন করতে হবে উল্লেখ করে সচিব বলেন, ‘তফসিল ঘোষণার এখতিয়ার সম্পূর্ণ নির্বাচন কমিশনের। এ সংক্রান্ত কমিশন সভা এখনও অনুষ্ঠিত হয়নি।’ নভেম্বর মাসের দ্বিতীয়ার্ধের যেকোনও দিন তফসিল হতে পারে বলেও জানান সচিব।
সূত্র জানায়, রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাতে জাতীয় নির্বাচন আয়োজনে এখন পর্যন্ত যেসব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে, তার সারসংক্ষেপ জানাবে কমিশন। ভোটগ্রহণের পরিকল্পনা সম্পর্কেও রাষ্ট্রপতিকে অবহিত করবে। প্রস্তুতি নিয়ে রাষ্ট্রপতি পরামর্শ ও নির্দেশনা দিলে তা শুনবে কমিশন। এরপরই আগামী সপ্তাহে কমিশন সভা করে নির্বাচনের তফসিল চূড়ান্ত করবে ইসি। রেওয়াজ অনুযায়ী জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে তফসিল ঘোষণা করবেন সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল। রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন বিটিভি ও বাংলাদেশ বেতার ওই ভাষণ সম্প্রচার করবে।রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাতের পর আগামী রবিবার বা সোমবার কমিশন সভা হতে পারে বলে কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে। আগামী সপ্তাহের শেষ দিকে ১৩ থেকে ১৫ নভেম্বরের মধ্যে যেকোনও দিন তফসিল ঘোষণার সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন ইসির একাধিক কর্মকর্তা। এক্ষেত্রে ১৫ নভেম্বেরর ওপর জোর দেওয়া হচ্ছে বলে তারা জানান। আগামী জানুয়ারির প্রথম দিকে ভোটগ্রহণের পরিকল্পনা রয়েছে ইসির বলে জানা গেছে।
উল্লেখ্য, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে ২০১৮ সালের ১ নভেম্বর তৎকালীন কে এম নূরুল হুদা কমিশন রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন। পরে ওই বছরের ৩ নভেম্বর কমিশন সভায় তফসিল চূড়ান্ত হয়। তফসিল ঘোষণা হয় ৮ নভেম্বর।
ইসি সচিবালয়ের কর্মকর্তারা বলছেন, সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা থেকে ভোটগ্রহণ পর্যন্ত সাধারণত ৪০-৫০ দিন সময় হাতে রেখে তারিখ নির্ধারণ করা হয়। এক্ষেত্রে মনোনয়নপত্র দাখিল ১০-১২ দিন, যাচাই-বাছাই অন্তত চার দিন, প্রত্যাহারের সময় সাত দিন এবং প্রচারণার জন্য ২০-২১ দিন সময় দেয় ইসি। অবশ্য আইন বা বিধিতে তফসিল থেকে ভোট নেওয়ার মধ্যে কত দিনের পার্থক্য থাকবে, সে বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলা নেই। তবে প্রার্থীদের প্রচারণার জন্য ন্যূনতম ১৫ দিন সময় দেওয়ার বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এছাড়া প্রার্থীরা যাতে সব প্রস্তুতি রেখে মনোনয়নপত্র জমা দিতে পারেন এবং মনোনয়নপত্র বাতিল হলে আপিল করতে পারেন, সেটি বিবেচনা করে একটা যৌক্তিক সময় দেওয়া হয়।
একাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার বিষয়টি পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, প্রথমে ২০১৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর ভোটগ্রহণের তারিখ নির্ধারণ করে ৮ নভেম্বর তফসিল ঘোষণা করা হয়েছিল। পরে ৩০ ডিসেম্বর ভোটগ্রহণের তারিখ করে ১৩ নভেম্বর পুনঃতফসিল করে হুদা কমিশন। এক্ষেত্রে প্রথম তফসিল থেকে ভোটগ্রহণের মধ্যবর্তী সময় ছিল ৪৫ দিন এবং পুনঃতফসিলের পর মধ্যবর্তী সময় ছিল ৪৭ দিন।
এছাড়া বিগত কয়েকটি সংসদ নির্বাচন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, তফসিল ঘোষণা থেকে ভোটগ্রহণ পর্যন্ত ৪০ দিনের বেশি ও ৫০ দিনের কম সময়ের ব্যবধান রাখা হয়েছিল। দশম সংসদ নির্বাচনে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি ভোটগ্রহণের দিন ঠিক করে তফসিল ঘোষণা করা হয়েছির আগের বছরের ২৫ নভেম্বর। এই হিসাবে তফসিল ঘোষণা থেকে ভোট নেওয়ায় ব্যবধান ছিল ৪২ দিন। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর ভোট নেওয়ার দিন ঠিক করে তারও আগে ২৩ নভেম্বর যে তফসিল দেওয়া হয়, তাতে ব্যবধান ছিল ৪৭ দিন। এর আগে পঞ্চম থেকে অষ্টম সংসদেও ৪২ থেকে ৪৭ দিনের ব্যবধান রাখা হয়েছিল। অবশ্য প্রথম সংসদ নির্বাচনসহ শুরুর দিকে কয়েকটির ক্ষেত্রে দুই মাস বা তার বেশি সময় দেওয়ার রেকর্ড রয়েছে।
সংবিধান অনুযায়ী, গত ১ নভেম্বর দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের ক্ষণগণনা শুরু হয়েছে। আগামী ২৯ জানুয়ারির মধ্যে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ২০১৯ সালের ৩০ জানুয়ারি একাদশ সংসদের প্রথম বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেই হিসাবে আগামী বছরের ২৯ জানুয়ারির পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।