বাবুর্চিকে ফাঁসিয়ে ১৪জন চাকুরী প্রত্যাশীর ৪৯ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-রেজিস্ট্রার মুহা. মুজাম্মেল হোসাইন এর বিরুদ্ধে। নানা চাপে ইতোমধ্যে আট লাখ টাকা পরিশোধ করেছেনও তিনি। তবে বাকি টাকা আত্মসাতের চেষ্টায় সহায়তাকারী বাবুর্চি জাহিদ কাজীকে ভারতে পাচার করাসহ একাধিক মামলা দিয়ে হয়রানী আর গ্রেফতার করানোর মত নোংরা কৌশল চালানোর অভিযোগ রয়েছে ওই উপ-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে। এছাড়াও বাবুর্চির সাদা ব্যাংক চেক জমা ও উপ-রেজিস্ট্রারের নিজ স্বাক্ষরিত প্রত্যয়নপত্র দিয়ে কয়েকটি এনজিও আর সমবায় সমিতি থেকে প্রায় ২০ লাখ টাকা উত্তোলনকৃত ঋণের টাকা আত্মসাতের অভিযুক্ত ওই উপ-রেজিস্ট্রার।
চক্রে চার সদস্যের সম্পৃক্ততা থাকলেও অধিনস্থ নীরিহ বাচুর্চির উপর দায় চাপানোর চেষ্টায় এই অপকৌশল চালানো হচ্ছে বলে দাবি ভুক্তভোগীর। এমনকি মানিকগঞ্জের চাকুরী প্রত্যাশী মামুনের কাছ থেকে নেয়া চার লাখ টাকার জিম্মা স্বরূপ দেয়া ব্যাংক চেকের পাতাটিও টাকা দেয়ার আশ্বাসে নিয়ে ছিড়ে ফেলেছেন উপ-রেজিস্ট্রার মুজাম্মেল বলে অভিযোগ তুলেছেন প্রতারণার শিকার মামুন। চার লাখ টাকা লেখা ছিড়ে ফেলা চেকটি সোনালী ব্যাংক মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রঃবিঃ শাখা টাঙ্গাইল এর। যার চেক নম্বর ১০০০০০১৩৯।
চাকুরী প্রত্যাশী আর প্রতারণার ফাঁদে পরা বাবুর্চির দেয়া একাধিক অভিযোগপত্রের সত্যতা নিশ্চিতে তদন্ত কমিটি গঠণ করেছেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলেও জানা গেছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব বিভাগের উপ-রেজিস্ট্রার সত্য সাহার বিরুদ্ধে রয়েছে সুদে টাকা খাটানোসহ বাবুর্চি জাহিদ কাজীর শ্যালক নাহিদ কাজীকে চাকুরী দেয়ার নামে ১০ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ। ভুক্তভোগী নাহিদ কাজী বিশ^বিদ্যালয়ের গেস্ট হাউজে তিনমাস চাকুরীর সুযোগ পান। এরপর তাকেও ছাটাই করা হয়। পরবর্তীতে অফিসার সমিতির সভাপতি ও চতুর্থ শ্রেণীর সভাপতির সহায়তায় পাঁচ লাখ ফেরত পেলেও বাকি পাঁচ লাখ টাকা এখনও পাননি ভুক্তভোগী নাহিদ কাজীর পরিবার।
বিএমবি বিভাগের উপ-রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন এর বিরুদ্ধে চল্লিশ হাজার ধার দিয়ে বাবুর্চি জাহিদ কাজীর স্ত্রীর তিন ভরি স্বর্ণালঙ্কার আত্মসাতের অভিযোগ। এছাড়াও বাবুর্চি জাহিদ কাজীকে স্বপরিবারে ভারতে পাচারের অভিযোগ রয়েছে শহীদ জিয়াউর রহমান হলের নিরাপত্তা প্রহরী প্রজন কুমার দাসের বিরুদ্ধে। অভিযুক্তরা ওই নিয়োগ বাণিজ্য চক্রের সদস্য বলে অভিযোগ তুলেছেন বাবুর্চি জাহিদ কাজীসহ তার পরিবার।
উপ-রেজিস্ট্রার মুজাম্মেলের যোগসাজসে সম্প্রতি বাবুর্চি জাহিদ কাজী গ্রেফতার হওয়ায় আতঙ্কে স্কুল পড়ুয়া ছেলে-মেয়ে নিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন জাহিদ কাজী স্ত্রী সীমা খাতুন বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক সূত্র। জাহিদ কাজী বিশ্ববিদ্যালয় গেস্ট হাউজে বাবুর্চি পদে কর্মরত।
২০ হাজার বেতন পাওয়া চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারীকে এনজিও ও সমবায় সমিতির এত টাকা ঋণ দেয়া নিয়ে যেমন সন্দেহের জন্ম নিয়েছে, অন্যদিকে রেজিস্ট্রারের পরিবর্তে বিধি বর্হিঃভুত উপ-রেজিস্ট্রারের স্বাক্ষরিত কর্মচারী সনাক্তের প্রত্যয়নপত্রটিও তেমন রহস্যজনক বলে মনে করছেন ভুক্তভোগীদের স্বজনরা।
অভিযুক্ত মুহা. মুজাম্মেল হোসাইন মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-রেজিস্ট্রার। তিনি ইংরেজী বিভাগে কর্মরত। চক্রের অন্যান্য সদস্যরা হলেন-সত্য সাহা উপ-রেজিস্ট্রার ও হিসাব বিভাগে কর্মরত। মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন উপ-রেজিস্ট্রার ও বিএমবি বিভাগে কর্মরত। এছাড়া স্বপরিবারে বাবুর্চিকে ভারত পাচারের মূল সহযোগি প্রজন কুমার দাস বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ জিয়াউর রহমান হলে নিরাপত্তা প্রহরী হিসেবে কর্মরত।
প্রতারণার ফাঁদে পরা চাকুরী প্রত্যাশীরা হলেন- ময়মনসিংহের হানিফা, উনার পাওনা সাড়ে তিন লাখ টাকা। মানিকগঞ্জের মামুন হোসেন, উনার পাওনা চার লাখ টাকা। টাঙ্গাইল সদর উপজেলার পোড়াবাড়ীর হৃদয়, উনার পাওনা এক লাখ টাকা। চারাবাড়ীর ফেরদৌসী, উনার পাওনা সাড়ে তিন লাখ টাকা। ইতোমধ্যে তিনি দুই লাখ টাকা ফেরত পেয়েছেন। সন্তোষের মিতু, উনার পাওনা দুই লাখ টাকা। একই এলাকার লালা মিয়া, উনার পাওনা ছয় লাখ টাকা। ফারুক, উনার পাওনা চার লাখ টাকা। শাহনাজ বেগম. উনার দেড় লাখ টাকা। কাগমারীর রাসেল, উনার পাওনা পাঁচ লাখ টাকা। বালুচড়ার শফি, উনার পাওনা পাঁচ লাখ টাকা, ইতোমধ্যে তিনি চার লাখ টাকা ফেরত পেয়েছেন। সাগর এর পাওনা আট লাখ টাকা, ইতোমধ্যে তিনি দুই লাখ টাকা ফেরত পেয়েছেন। নাজমা পাওনা আড়াই লাখ টাকা, হাসান দুই লাখ টাকা আর সন্তোষ এতিমখানার আছিয়ার পাওনা এক লাখ টাকা। ফরিদুল ইসলাম ফরিদের পাওনা আড়াই লাখ টাকা।এছাড়াও বিশ^বিদ্যালয় গেস্ট হাউজে বাবুর্চি পদে কর্মরত জাহিদ কাজীর কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে সাড়ে ১৫ লাখ নেয়া হয়েছে।
ভুক্তভোগী ও স্বজনদের অভিযোগ, উপ-রেজিস্ট্রার মুজাম্মেলের প্রতারণার মাধ্যমে চাকুরী প্রত্যাশীদের টাকা নেয়ার বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ অবগত হওয়ার পরও তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা না নিয়ে দায়সারা তদন্ত কমিটি গঠণ করে কালক্ষেপন করছেন। যার ফলে প্রতারক মুজাম্মেলসহ চক্রের চার সদস্যই এখনও চাকুরীতে বহাল রয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সংগঠণের সহায়তায় চাকুরী প্রত্যাশী কয়েকজনের কিছু টাকা অভিযুক্ত উপ-রেজিস্ট্রার মুজাম্মেল ফেরত দিলেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কঠোর কোন ভূমিকা না থাকায় বাকি টাকা পাওয়া যাচ্ছেনা। একজন উপ-রেজিস্ট্রার টাঙ্গাইল শহরের বেপারীপাড়া, পলাশতলী আর ঢাকার মত নামিদামী এলাকায় তিন চারটি ফ্লাটের মালিক কিভাবে হয়েছেন এ বিষয়েও কোন খোঁজখবর নেয়ার প্রয়োজন মনে করেননি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এর ফলে এমন বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন ওই মুজাম্মেল চক্র। বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকুরী দেয়ার নামে সাধারণ মানুষের কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে এরই মধ্যে বনে গেছেন শিল্পপতি। অপরাধ প্রমানে আর আইনী ব্যবস্থা গ্রহণে জেলা প্রশাসন, দুদক আর পুলিশ প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভুক্তভোগীদের পরিবার।
প্রতারণার শিকার মামুন হোসেন জানান, আমার বাড়ি মানিকজঞ্জের দৌলতপুর থানায়। গত ২০১৯সালে আমাকে চাকুরী দেয়ার কথা বলে বাবুর্চি পুষা আন্টির বাসা থেকে উপ-রেজিস্ট্রার মুজাম্মেল স্যার চেক দিয়ে আমার কাছ থেকে ৪ লাখ টাকা নেন। চাকুরী না হলে তিনি ওই টাকা তিন মাসের মধ্যে ফেরত দেয়ার আশ্বাসও দেন।
তিনি জানান, এরমাঝে একদিন মুজাম্মেল স্যার আমাকে ফোন দিয়ে টাকা নিয়ে যেতে বলেন। আমি আসলে তিনি আমাকে দেয়া উনার ব্যাংক চেকটি চান এবং সেটি নিয়ে ছিড়ে ফেলেন। এখন আমার কাছে প্রমান স্বরূপ ওই চেকের একটি ফটোকপি আছে। সোনালী ব্যাংক মওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রঃবিঃ শাখা টাঙ্গাইল এর চেক নম্বর ১০০০০০১৩৯। চেকটি ছিড়ে ফেলার কারণে আমি তার কাছে আমার টাকার প্রমানপত্র দাবি করলে তিনি আমাকে বাবুর্চি জাহিদ কাজীর একটি চেক দেন। এখন মুজাম্মেল স্যার আমাকে টাকা দিচ্ছেন না। আমি পাওনা টাকা ফেরত ও প্রতারক উপ-রেজিস্ট্রার মুজাম্মেলের শাস্তি দাবি করছি।
ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের আয়া নাজমা বেগম জানান, প্রায় সাড়ে তিন বছর হলো আমার ছেলে ফরিদুল ইসলাম ফরিদকে চাকুরী দেয়ার আশ্বাসে আড়াই লাখ টাকা নেন উপ-রেজিস্ট্রার মুজাম্মেল স্যার। টাকা দেই দিচ্ছি করলে এখনও তিনি আমাকে টাকা ফেরত বা ছেলেকে চাকুরী দিচ্ছেন না। ছেলের চাকুরী না পাওয়ায় আমি আয়ার কাজ করে সংসার চালাচ্ছি। আমি পাওনা টাকা উদ্ধারে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
শাহজানীর আব্দুল্লাহ্ জানান, ২০১৬ সালে আমাকে চাকুরী দেয়ার কথা বলে সাড়ে তিন লাখ টাকা নেন উপ-রেজিস্ট্রার মুজাম্মেল স্যার। টাকা নেয়ার সময় বাবুর্চি জাহিদ কাজীও উপস্থিত ছিলেন। ইতোমধ্যে দুই লাখ টাকা ফেরত দিলেন বাকি দেড় লাখ টাকা দিচ্ছেন না।
বাবুর্চি জাহিদ কাজী জানান, চাকুরী প্রলোভনে উপ-রেজিস্ট্রার মুজাম্মেল স্যার প্রায় এক কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। বিচার সালিশের পর বেশ কিছু টাকা পরিশোধ করেছেনও তিনি। এখন চাকুরী বাবদ ৪৯ লাখ টাকা আর আমার মাধ্যমে উত্তোলন করা এনজিও’র পাওনা টাকা রয়েছে প্রায় ২০ লাখ টাকা।
তিনি জানান, মুজাম্মেল স্যারের যোগসাজসে এরই মধ্যে আমার নামে ১৪টি মামলা হয়েছেন। তার উদ্দেশ্য মামলাগুলোতে পুলিশ আমাকে আটক করলে আমি যেন তদন্ত কমিটির কাছে কোন তথ্য প্রমান প্রকাশ করতে না পারি। এছাড়াও তিনি এনজিও’র কর্মকর্তাদের এক লাখ করে টাকা ঘুষ দিয়ে টাকা উত্তোলনে তিনি জড়িত বিষয়টি সাংবাদিকদের কাছে না বলার জন্য সতর্ক করে রেছেছেন। এর প্রমানও আমার কাছে আছে। এছাড়াও এনজিওসহ সব প্রতিষ্ঠানের ঋণপ্রস্তাবের স্বাক্ষী আর বিশ^বিদ্যালয়ের কর্মচারী সনাক্তে প্রত্যয়নপত্রটি দিয়ে সহযোগিতা করেন উপ-রেজিস্ট্রার মুজাম্মেল।
তিনি আরও জানান, মুজ্জামেল স্যার আমাকে ও পরিবারের সদস্যদের ভয়ভীতি দেখিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা প্রহরী প্রজনের সহায়তায় ভারত পাচার করে দিয়েছিলেন। পরবর্তীতে আমি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা নিয়ে ভারত থেকে আবার বাংলাদেশে ফিরে আসি ও বিশ^বিদ্যালয়ের চাকুরীতে যোগদান করি। মুজাম্মেল স্যার আমাকে ফাঁসিয়ে চাকুরী প্রত্যাশী আর এনজিওর টাকা আত্মসাতের চেষ্টা করছেন। আমি অশিক্ষিত মানুষ হওয়ার সুযোগ নিয়ে প্রতিটি লেনদেনে আমার ব্যাংক চেক ব্যবহার করেনও তিনি। উনার ষড়যন্ত্র এখন আমি বুঝতে পারছি। প্রতারণার মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে মুজাম্মেল স্যার রাজধানী ঢাকায় ১টিসহ টাঙ্গাইলের পলাশতলী ও বেপারীপাড়ায় মোট তিনটি ফ্লাট কিনেছেন। তার বিরুদ্ধে দুদকের তদন্ত চলছে। এছাড়াও আমি সুবিচার চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনসহ বিভিন্ন দফতরের অভিযোগ দিয়েছি।
পাঁচ লাখ টাকা দেয়ার কথা স্বীকার করলেও চাকুরী দেয়ার কথা অস্বীকার করেছেন হিসাব বিভাগের উপ-রেজিস্ট্রার সত্য সাহা। জাহিদ কাজীর আরও দুই চেক তার কাছে রয়েছে বলেও জানান তিনি।
চল্লিশ হাজার ধার দেয়াসহ বাবুর্চি জাহিদ কাজীর স্ত্রীর তিন ভরি স্বর্ণালঙ্কার আত্মসাতের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বিএমবি বিভাগের উপ-রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ দেলোয়ার হোসেন। অভিযোগের কোন প্রমান নেই বলেও দাবি করেছেন তিনি।
দালালের মাধ্যমে ভারতের বারাসাতে পাঠানোর কথা স্বীকার করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ জিয়াউর রহমান হলের নিরাপত্তা প্রহরী প্রজন কুমার দাস। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অনুরোধে নিজের টাকায় তাদের ভারত থেকে ফিরিয়ে আনার কথা জানান তিনি।
তিনি জানান, টাঙ্গাইলের বিভিন্ন ব্যাংক ও এনজিও থেকে চেক দিয়ে অনেক টাকা ঋণ নেয় বাবুর্চি জাহিদ কাজী। ওই টাকা পরিশোধ করতে না পারায় বেশ কয়েকটি মামলার ওয়ারেন্ট ভুক্ত আসামী হয় জাহিদ কাজী। পুলিশের হাত থেকে বাঁচতে জাহিদ কাজী স্বপরিবারে ভারত পালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। আমার অনেক আত্মীয় স্বজন ভারতে থাকায় জাহিদ আমার সহযোগিতা নেয়। একই বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকুরী করার কারণে আমি তাদের ভারত পাঠিয়েছিলাম। জাহিদকে ভারত পাঠিয়ে আমার ক্ষতি ছাড়া লাভ হয়নি। সে এখন তাদের পাচার করা হয়েছিল বলে প্রচার করছে।
বিশ্ববিদ্যালয় চতুর্থ শ্রেণী কর্মচারী সমিতির সভাপতি আমিনুর ইসলাম জানান, মুজাম্মেল আর সত্য সাহা স্যারকে নিয়ে একাধিক বিচার হয়েছে। জাহিদ কাজীর প্রতিটি এনজিওর ঋণপ্রস্তাবের স্বাক্ষী উপ-রেজিস্ট্রার মুজাম্মেল স্যার। স্বার্থ ছাড়া কেন একজন বাবুর্চির এনজিওর ঋণপ্রস্তাবের স্বাক্ষী হবেন উপ-রেজিস্ট্রার মুজাম্মেল স্যার ? বিষয়টি সন্দেহজনক। এছাড়া অনেকে সরাসরি চাকুরী বাবদ মুজাম্মেল স্যার টাকা দিয়েছেন বলে অভিযোগ পেয়েছেন তিনি।
তিনি জানান, জাহিদ কাজী ঋণ বাবদ পাঁচ লাখ টাকার একটি চেক পান। ওই চেকটি ভাঙ্গিয়ে সত্য সাহা ওই টাকাগুলো নিয়েছে বলে তাদের কাছে অভিযোগ দেন জাহিদ কাজী। সালিশে জানতে পারি সত্য সাহা স্যারের কাছ থেকে সুদে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা নিয়েছিলেন, যার আসল ও লাভ বাবদ ওই পাঁচ লাখ টাকা নেয়া হয়েছে বলে সালিসে জানিয়েছিলেন হিসাব বিভাগের উপ-রেজিস্ট্রার সত্য সাহা। তবে জাহিদ কাজীর অভিযোগ তার শ্যালক নাহিদ কাজীকে চাকুরী দেয়া বাবদ ১০ লাখ নিয়েছেন সত্য সাহা। গেস্ট হাউজে নাহিদকে চাকুরী দেয়া হলেও তিন মাস পর তাকে আবার বাদ দেয়া হয়েছে।
তিনি আরও জানান, জাহিদ কাজী একজন বাবুর্চি। সে চাকুরী দেয়ার কে, বড় কেউ জড়িত না থাকলে চাকুরীর জন্য আর এনজিওগুলো এত টাকা ঋণ দিত বলে আমি মনে করিনা। একাধিকবার চেষ্টা করা হলেও ফোন ধরেননি ৪৯ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগ উঠা মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ^বিদ্যালয়ের উপ-রেজিস্ট্রার মুহা. মুজাম্মেল হোসাইন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর ইমাম হোসেন বলেন, অভিযোগের তদন্ত শেষ পর্যায়ে রয়েছে। দ্রুতই বিশ^বিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে তদন্ত প্রতিবেদন হস্তান্তর করা হবে।