বয়ঃসন্ধিকালে প্রথম ব্রণ দেখা দেয়। সাধারণত ছেলেদের ১৬ থেকে ১৯ এবং মেয়েদের ১৪ থেকে ১৬ বছর বয়সে ব্রণ হওয়ার প্রবণতা বেশি। তবে যেকোনো বয়সেই ব্রণ হতে পারে। ব্রণ শুধু মুখে নয়; পিঠে, ঘাড়ে ও বুকেও হতে পারে। মেয়েদের পিরিয়ডের আগে ও পরে ব্রণ বাড়তে পারে।
ব্রণ নানা ধরনের হয়। ছোট ছোট গোল ফুসকুড়ি, লালচে ছোট ছোট গোটা, আবার পুঁজপূর্ণ বড় বড় চাকাও হতে পারে। ব্যথাও হতে পারে। কিছু ব্রণ টিপলে ভাতের দানার মতো বের হয়ে আসে। কিছু ব্রণ পেকে খুব যন্ত্রণাদায়ক হয়। ত্বকে ছিদ্রও দেখা দিতে পারে। কিশোরদের ক্ষেত্রে বয়ঃসন্ধিকালে অ্যান্ড্রোজেন হরমোনের আধিক্য থাকলে এবং মাসিক বা গর্ভাবস্থায় হরমোনের মাত্রার পরিবর্তন ব্রণের জন্য দায়ী। ত্বকের মেকআপ ঠিকমতো না তুললেও ব্রণ হতে পারে। অত্যধিক গরম বা বেশি ঘাম, তৈলাক্ত চুল ও খুশকি, মানসিক চাপ ও ঠিকমতো ঘুম না হলে ব্রণ হতে পারে। জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি, স্টেরয়েড, খিঁচুনি বা মানসিক রোগের ওষুধের কারণে ব্রণ হয় কারও কারও।
সঠিক পরিচর্যা ও যত্নের মাধ্যমে ব্রণ দূর করা যায়। অনেক সময় ব্রণ ত্বকে গভীর প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে। ব্রণ পেকে পুঁজ হয়ে ব্যথা করতে পারে। এ জন্য মলম প্রয়োগ, অ্যান্টিবায়োটিক অথবা রেটিনয়েডজাতীয় ওষুধ সেবনের প্রয়োজন হতে পারে। রাতে ঘুমানোর সময় ভালো করে মুখ ধুয়ে শুধু ব্রণের ওপর চিকিৎসকের পরামর্শমতো জেল লাগান। এর ব্যবহারে অনেকের চুলকানি বা ত্বকে লাল আভা হতে পারে, যা দু-এক দিন পর ঠিক হয়ে যায়। তবে অতিরিক্ত চুলকানি বা লালচে বেশি হলে ব্যবহার বন্ধ করে দিতে হবে। প্রোটিন ও ভিটামিনসমৃদ্ধ খাবার খেতে হবে। মাথায় খুশকি থাকলে অ্যান্টিড্যানড্রাফ শ্যাম্পু ব্যবহার করা উচিত। ব্রণ দেখা দিলে আয়োডিনযুক্ত খাবার, যেমন সামুদ্রিক শৈবাল, গরুর কলিজা, রসুন এড়িয়ে চলুন। দিনে কমপক্ষে ৮-১০ গ্লাস পানি পান করুন। দিনে তিন-চারবার মাইল্ড সোপ বা ফেসওয়াশ দিয়ে মুখের ত্বক পরিষ্কার করা এবং সানস্ক্রিন ব্যবহার করা উচিত। ব্রণে হাত লাগাবেন না বা খুঁটবেন না। এতে ইনফেকশন বা পেকে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। ত্বকের ধরন অনুযায়ী প্রসাধনী ব্যবহার করতে হবে। রাতে সাত থেকে আট ঘণ্টা ঘুমাতে হবে এবং মানসিক চাপমুক্ত থাকতে হবে। ব্রণের সমস্যা থাকলে আঠালো, তৈলাক্ত ক্রিম, লোশন বা মেকআপ এড়িয়ে ওয়াটার–বেইজড মেকআপ ব্যবহার করা ভালো। আয়োডিনযুক্ত খাবার, যেমন সামুদ্রিক শৈবাল, গরুর কলিজা, রসুন এড়িয়ে চলুন। দিনে কমপক্ষে ৮-১০ গ্লাস পানি পান করুন। সুষম সহজপাচ্য হালকা খাবার, শাকসবজি, ফলমূল বেশি খান। জিংক, ভিটামিন ই এবং ভিটামিন বি৬ ভালো কাজ করে। এ জন্য খেতে হবে শস্যজাতীয় খাবার, মাছ, গরুর কলিজা, মসুর ডাল, বরবটি, রাজমা, পনির, গরুর দুধ, কর্নফ্লেক্স, ডিম, তেল, মুলাজাতীয় সবজি, তৈলবীজ, বাদাম, সবুজ সবজি ইত্যাদি। ভিটামিন এ এবং সি–সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া জরুরি। অত্যধিক গুরুপাক খাবার, অধিক শর্করা, অধিক মিষ্টি, অধিক চর্বিজাতীয় খাবার এড়িয়ে চলুন। ডুবো তেলে ভাজা খাবার, কোমল পানীয়, দুধ চা বাদ দিন। ডা. জাহেদ পারভেজ, সহকারী অধ্যাপক, ত্বক-চর্ম-যৌন ও হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট বিভাগ, সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ঢাকা।