সংস্কার দিয়েই যাত্রা শুরু হয়েছিল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল— বিএনপি। দলের প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ঘোষিত ১৯ দফা কর্মসূচি ছিল স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম বড় সংস্কার ভাবনা। দলের মহাসচিব ও বিশ্লেষকদের মতে, ৪৮তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে বিএনপির সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো জনআকাঙ্ক্ষা অনুযায়ী কর্মসূচি নির্ধারণ এবং প্রোপাগান্ডার মোকাবিলা করে সংসদকে রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করা।
১৯৭৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর দেশের ঘটনাবহুল এক সময়ে আত্মপ্রকাশ ঘটে বিএনপির। প্রেসিডেন্ট জিয়ার হাত ধরেই শুরু হয় বহুদলীয় গণতন্ত্রের চর্চা। পরবর্তীতে দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া রাষ্ট্রক্ষমতায় থেকে যুগান্তকারী পদক্ষেপ নেন। স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন কিংবা ২০০৬-০৭ এর রাজনৈতিক অস্থিরতার সময় বিএনপির সংগ্রাম ইতিহাসে স্থান করে নিয়েছে।
দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, রাজনীতিতে সহনশীলতা, ভিন্নমতকে সম্মান করার সংস্কৃতি বিএনপির হাত ধরেই শুরু হয়। এখন আমাদের মূল চ্যালেঞ্জ ক্ষমতায় যাওয়া নয়, বরং বাংলাদেশকে একটি পূর্ণাঙ্গ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে পুনর্গঠন করা। প্রসঙ্গত, ১৯৭৭ সালের ৩০ এপ্রিল জিয়াউর রহমান যে ১৯ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করেছিলেন, তা-ই দেশের প্রথম বড় সংস্কার প্রস্তাব হিসেবে স্বীকৃত। এর ধারাবাহিকতায় খালেদা জিয়ার ‘ভিশন ২০৩০’ এবং তারেক রহমানের ৩১ দফা রাষ্ট্র মেরামতের রূপরেখা প্রকাশ পায়।
রাজনীতি বিশ্লেষক হোসেন জিল্লুর রহমান মনে করেন, প্রেসিডেন্ট জিয়া শুধু রাজনৈতিক সংস্কার নয়, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও আঞ্চলিক সহযোগিতার দিকেও নজর দিয়েছিলেন। তিনি সার্কের স্বপ্নদ্রষ্টা ছিলেন। এশিয়াটিক সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মো. ছিদ্দুকুর রহমান খান বলেন, স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে জিয়াউর রহমানের সংস্কারই ছিল দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পুনর্গঠনের ভিত্তি।
প্রায় পাঁচ দশক ধরে নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে আসা বিএনপিকে বিশ্লেষকরা মনে করেন, সামনে আরও বড় চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। বিশেষ করে, উদার গণতান্ত্রিক দল হিসেবে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করা ছাড়া বিকল্প নেই। উল্লেখ্য, দীর্ঘ দেড় যুগ পর তুলনামূলক অনুকূল রাজনৈতিক পরিবেশে এবারের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন করছে বিএনপি। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর নতুন রাজনৈতিক অধ্যায়ে প্রবেশ করেছে বাংলাদেশ।