টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে মহেড়া গ্রামের স্বপ্না আক্তার। তার বাবা কৃষি কাজ ও মা একটি স্কুলের দপ্তরির চাকরি করে কোন রকম সংসার চালাচ্ছে। দুই ভাই ও তিনি খুব কষ্ট করে মানুষ হচ্ছেন। পরিবারে অভাব অনটনের মাঝেও তিনি এসএসসি পাশ করেছেন।
বুধবার (২০ নভেম্বর) বিকেলে টাঙ্গাইলে বাংলাদেশ পুলিশ ট্রেইনি রিক্রুট (টিআরসি) পদে নিয়োগ পেয়ে তার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। তিনি বলেন, ছোট বেলা থেকে স্বপ্ন ছিলো মানুষের সেবা করার। কিন্তু সেবা করার সময় থাকলেও অর্থ না থাকায় মানুষের পাশে দাঁড়ানো যায় না। তবে পুলিশে চাকরি করলে সহজেই মানুষ ও দেশের সেবা করা যায়। তাই পুলিশ হওয়ার খুব ইচ্ছে ছিলো। তবে বিনা ঘুষে ১২০ টাকায় আমার স্বপ্ন পূরণ হবে তা কখনও কল্পনাও করতে পারিনি। আমি বিনা ঘুষে মানুষের সেবা করার জন্য সকলের দোয়া চাই। শুধু স্বপ্না আক্তার নয়, তার মতো টাঙ্গাইলে আরো ১০৫ জনের ১২০ টাকায় স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। এর মধ্যে ৯ জন নারী।
টাঙ্গাইল জেলা পুলিশ সূত্রে, বাংলাদেশ পুলিশ ট্রেইনি রিক্রুট (টিআরসি) পদে ৬ হাজার ৩১৯ জন আবেদন করে টাঙ্গাইল থেকে। শারিরীক পরীক্ষা শেষে লিখিত পরীক্ষার জন্য উত্তীর্ণ হয় ৮১১ জন। ৩৬১ জন ভাইবা পরীক্ষা দিয়ে ১০৫ জন উত্তীর্ণ হয়। পরে বুধবার বিকেলে ফলাফল প্রকাশ হলে অনেকেই আবেগে আপ্লুত হয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। এক বন্ধু আরেক বন্ধুকে জড়িতে ধরে উচ্ছাস প্রকাশ করে। এ সময় উপস্থিত ছিলেন, টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার মো. সাইফুল ইসলাম সানতু (বিপিএম) সেবা, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মুহাম্মদ সরোয়ার হোসেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল্লাহ আল মামুন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ট্রাফিক) রাকিবুল হাসান রাসেল, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. সোহেল রানা, মানিকগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুজন সরকার, গাজীপুর সদর সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিরাজুল ইসলাম প্রমুখ।
সরকারি ফি দিয়ে নিয়োগ পাওয়া টাঙ্গাইল সদর উপজেলার করটিয়া ইউনিয়নের জাহিদুল ইসলাম বলেন, এতো দিন জানতাম ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা ঘুষ ছাড়া পুলিশে চাকরি হয় না। আজকে ১২০ টাকা চাকরি পেয়ে সেটি ভুল প্রমাণ হলো। বিনা ঘুষে চাকরি দেয়ায় টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপারের কাছে চির কৃতজ্ঞ।
এ বিষয়ে টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার মো. সাইফুল ইসলাম সানতু (বিপিএম) জানান, নিয়োগে অনিয়ম রোধে সবাই একসঙ্গে কাজ করেছি। সব মিলিয়ে এ নিয়োগ প্রক্রিয়া স্বচ্ছতার সঙ্গে মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে হয়েছে। নিয়োগে কোনো অবৈধ লেনদেন বা স্বজনপ্রীতি হয়নি।