মো: মুসা মিয়া: টাঙ্গাইলে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢল ও বৃষ্টিপাতের কারণে দীর্ঘদিন ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাঠে ও লোকালয়ে পানি জমে আছে। এর মধ্যে ফের বাড়তে শুরু করেছে যমুনা নদীর পানি। ফলে বিদ্যালয়ে পাঠদান বন্ধ রেখেছে কর্তৃপক্ষ। তবে স্কুলে নিয়মিত যাচ্ছেন শিক্ষকরা।
জেলার বিভিন্ন উপজেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে দেখা গেছে, বিদ্যালয় মাঠ ও চতুর্দিক প্লাবিত। এতে করে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা পানি মাড়িয়ে বিদ্যালয়ে যেতে পারছে না।
এদিকে উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে ষান্মাসিক পরীক্ষা শুরু হওয়ায় বন্যার মধ্যেও শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে যাচ্ছে। তবে কয়েকটি বিদ্যালয়ে পানি থাকায় পরীক্ষা কার্যক্রম পার্শ্ববর্তী প্রাইমারি বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। শিক্ষকদের দাবি, যেহেতু বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীই আসছে না সেখানে পানি মাড়িয়ে নিয়মিত শিক্ষকরা অযথাই বিদ্যালয়ে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। কর্তৃপক্ষের নির্দেশে পানি ভেঙেই নিয়মিত বিদ্যালয়ে যেতে হচ্ছে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষ ও আঙ্গিনায় বন্যার পানি প্রবেশ করায় জেলার ভূঞাপুরে ১২টি এবং টাঙ্গাইল সদর উপজেলার ৩১টি বিদ্যালয়ে পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। তবে বিদ্যালয়গুলো নিয়মিত খোলা রয়েছে। অন্যদিকে কিছু মাধ্যমিক বিদ্যালয়েও ক্লাশ কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। ভূঞাপুর উপজেলার খানুরবাড়ি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক আব্দুর রহমান বলেন, বিদ্যালয় খোলা রয়েছে। শিক্ষকরা নিয়মিত যাচ্ছে পানি মাড়িয়ে। বিদ্যালয়সহ আশপাশের এলাকায় পানি থাকায় ছাত্র-ছাত্রীরা বিদ্যালয় আসছে না। ভূঞাপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এসএম মনিরুজ্জামান বলেন, উপজেলার সব মাধ্যমিক বিদ্যালয় খোলা রয়েছে। নিয়মিত পরীক্ষা হচ্ছে। তবে বন্যার কারণে উপজেলার চরাঞ্চলের শশুয়া উচ্চ বিদ্যালয় ও ভদ্রশিমুল উচ্চ বিদ্যালয়ের পানি রয়েছে। এতে ওই বিদ্যালয়ের পরীক্ষা কার্যক্রম পার্শ্ববর্তী প্রাইমারি বিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সুব্রত কুমার বণিক বলেন, বন্যার কারণে দুইটি উপজেলায় ৪৩টি বিদ্যালয়ে পানি উঠেছে। এতে ওইসব বিদ্যালয়ে পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। তবে বিদ্যালয় খোলা রাখা হয়েছে। শিক্ষকরা নিয়মিত বিদ্যালয়ে যাচ্ছেন। শিক্ষার্থীরা বিদ্যালয়ে না যাওয়ায় ক্লাস কার্যক্রম হচ্ছে না। জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেওয়া তথ্যমতে, গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনায় আবারও নতুন করে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়াও শাখা নদী গুলোতেও পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। ঝিনাই নদীর পানি জোকারচর পয়েন্টে ১২ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৯২ সেন্টিমিটার, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদীর পানি পোড়াবাড়ি পয়েন্টে ১০ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ২৪ সেন্টিমিটার, ধলেশ্বরী নদীর পানি এলাসিন পয়েন্টে ৯ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ২৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া ফটিকজানি নদীর পানি নলচাপা ব্রিজ পয়েন্টে ১০ সেন্টিমিটার, বংশাই নদীর পানি কাউলজানী পয়েন্টে ১১ সেন্টিমিটার, মির্জাপুর পয়েন্টে ২১ সেন্টিমিটার এবং মধুপুর পয়েন্টে ৯ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। এসব নদীর পানি বিপৎসীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। ফলে জেলার সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির আবারও অবনতি হয়েছে। এতে হাজার হাজার মানুষজন এখনও পানি বন্দি রয়েছেন।
এদিকে জেলার অনেক জায়গার বানভাসীরা ত্রাণ সহায়তা না পাওয়ায় মানবেতর জীবনযাপন করছেন। সপ্তাহখানেক ধরে এসব মানুষজন পানিবন্দি থাকায় তীব্র সুপেয় পানির অভাবে পড়েছেন। এছাড়া অনেক এলাকায় পানির স্রোতে রাস্তা ভেঙে যাওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ রয়েছে। এতে নিম্ন পরিবারের খেটে খাওয়ার মানুষজন নিদারুণ কষ্টে দিন পার করছেন।
ভূঞাপুর উপজেলার গোবিন্দাসী ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি রফিকুল ইসলাম মনি জানান, সপ্তাহখানেক হলো কষ্টাপাড়া, ভালকুটিয়া, খানুরবাড়ি ও স্থলকাশির মানুষজন পানিবন্দি রয়েছেন। এখন পর্যন্ত সরকারি বা বেসরকারিভাবে কোনো ত্রাণ সহায়তা পৌঁছায়নি বন্যার্তদের মাঝে। অনেক দুস্থ পরিবার কর্মহীন হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন।