জামায়াতে ইসলামীর ব্যানারে ঢাকায় কোনো সমাবেশ করার অনুমতি দেওয়া হবে না বলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান জানিয়েছেন। আর ঢাকার কোথায় বিএনপিকে সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হবে, সেই সিদ্ধান্ত ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার নেবেন বলে জানিয়েছেন তিনি। মন্ত্রী বলেছেন, বিএনপি যদি শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান করে, ডিএমপি কমিশনার নিশ্চয়ই তাদের অনুমতি দেবেন। মহান বিজয় দিবস উদ্যাপন সামনে রেখে আজ বুধবার সচিবালয়ে এক আন্তমন্ত্রণালয় সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ কথা বলেন।
জামায়াতে ইসলামী ঢাকার মতিঝিলের শাপলা চত্বরে সমাবেশ করতে চায় বলে গণমাধ্যমে এসেছে। এই সমাবেশের অনুমতি পাবে কি না, জানতে চাইলে আসাদুজ্জামান খান বলেন, ‘আমাদের দেশে অনেক দল, অনেক পথ, অনেক কিছু রয়েছে। জামায়াতে ইসলামী এর আগেও দু–এক জায়গায় আলোচনা করেছে। দেশের নিয়মকানুন মেনে, দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নির্দেশনা মেনে যে কেউ যেকোনো কথা বলতে পারে। জামায়াত বলে কোনো কথা নেই, যে কেউ, যেকোনো কথা বলতে পারে, এটা গণতান্ত্রিক দেশ, গণতান্ত্রিক চর্চা এখানে আছে। আমাদের কথা হলো, আমাদের যে আইনকানুন আছে, তার মধ্যে থেকে তাদের কথা বলতে হবে।’
এ বিষয়ে আরেক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এখন পর্যন্ত জামায়াতে ইসলামী নিবন্ধিত দল নয়। কাজেই তারা জামায়াতে ইসলামীর ব্যানারে যদি আসে, তাহলে তাদের অনুমতি দেওয়ার প্রশ্নই আসে না। জামায়াতে ইসলামী সমাবেশের অনুমতি চেয়েছে কি না, সে বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিষয়টি নিয়ে কমিশনারকে (ডিএমপির কমিশনার) জিজ্ঞাসা করার পরামর্শ দেন। বিএনপি ২৮ অক্টোবর ঢাকায় মহাসমাবেশ করার কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এ জন্য ঢাকা মহানগর পুলিশের কাছে আবেদনও করেছে দলটি। একই দিনে বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ ফটকে শান্তি সমাবেশের ডাক দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এখনো আওয়ামী লীগ বা বিএনপি কোনো দলকেই ২৮ অক্টোবর সমাবেশ করার অনুমতি দেওয়া হয়নি বলে জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘বিএনপি সমাবেশের অনুমতির যে অনুরোধ করেছে, ঠিক কীভাবে করেছে, সেটা পুলিশ কমিশনার জানেন। এত লোক আনবে বলে তারা (বিএনপি) ঘোষণা দিয়েছে কিংবা পত্রপত্রিকায় জানান দিচ্ছে কিংবা সামাজিক মাধ্যমে জানাচ্ছে, তারা নাকি সারা বাংলাদেশ থেকে যারাই বিএনপি করে, তাদের নিয়ে আসবে। কোনো সদস্যই নাকি বাদ থাকবে না, এ রকমই আমরা শুনছি। সে রকমই যদি হয়, তাহলে তো এত লোক ঢাকায় এলে একটি অন্য রকমের পরিস্থিতি হতে পারে। সে জন্যই আমাদের কমিশনার সাহেব তাদের কোথায় সমাবেশটা করতে দেবেন, সেটা কমিশনার সাহেব বুঝবেন, সেভাবেই তিনি সিদ্ধান্ত নেবেন। কমিশনার সাহেব এখন পর্যন্ত কাউকে সমাবেশের অনুমোদন দেননি।’
বিএনপির সমাবেশ ঘিরে ঢাকার প্রবেশপথ বন্ধ করা হবে কি না, সেই প্রশ্নে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘ঢাকার প্রবেশপথ কেন বন্ধ করব? মানুষ ঢাকায় আসেন ব্যবসার কাজে, চাকরির কাজে আসেন। ঢাকার বাইরে থেকে এসে ঢাকায় অফিস করেন। কাজেই ঢাকার পথ আমরা কেন বন্ধ করব? আমরা ঢাকার কোনো পথ বন্ধ করব না। তারা যদি শান্তিপূর্ণভাবে নির্দিষ্ট স্থানে অবস্থান করে এবং করে চলে যায়, আমাদের কিছু বলার নেই। আমরা সেখানে কোনো বাধা দেব না।’ বিএনপির সমাবেশ ঘিরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির শঙ্কা আছে কি না, সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে আসাদুজ্জামান খান বলেন, সরকার তো এমন একটা কিছু নয় যে তাদের ধাক্কা দিল পড়ে গেল। গণতান্ত্রিক সরকার ভোটের মাধ্যমে এখানে এসেছে, তার যে মেয়াদ সেই মেয়াদের পরে নির্বাচন হবে, তারপরেই সরকার পরিবর্তন হবে। সংবিধান অনুযায়ী, ধাক্কা দিলে সরকার পড়ে যাবে, এ ধরনের কোনো শব্দ লেখা নেই। সংবিধান রক্ষা করার দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর। সেই সংবিধানের ফ্রেমওয়ার্কের বাইরে যদি তারা (বিএনপি) কিছু করতে চেষ্টা করে, তাহলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের অর্পিত দায়িত্বটি পালন করবে। আরেক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘আমি সব সময়ই বলি, সব রাজনৈতিক দলের অধিকার রয়েছে তাদের গণতান্ত্রিক অধিকারের চর্চা করা। তাদের সবকিছু প্রচার-প্রচারণার নিয়মকানুন রয়েছে। নিয়মবহির্ভূত কিছু করলে সেখানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের মানা করবেন, বলবেন যে আইন ভাঙছেন। কাজেই আমাদের কথা স্পষ্ট, তারা (বিএনপি) যদি কমিশনারের কাছে আবেদন করে এবং তারা যদি বলে আমরা ভাঙচুর করব, অবরোধ করব, তাহলে তো কমিশনার সাহেব অনুমতি দেবেন না। আমি বলতে চেয়েছি, তারা যদি শান্তিপূর্ণভাবে অবস্থান করে, আমাদের কমিশনার সাহেব নিশ্চয়ই তাদের অনুমতি দেবেন।’ ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত পিটার হাস গত রোববার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের সঙ্গে সচিবালয়ে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছিলেন। সেই সাক্ষাতে চারটি বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছিল বলে জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। এ বিষয়টি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে স্পষ্ট করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
এবার মহান বিজয় দিবসে ঢাকাসহ সারা দেশে বিশেষ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হবে বলে জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, সামনে জাতীয় নির্বাচন থাকায় এখন পর্যন্ত সিদ্ধান্ত হলো প্যারেড গ্রাউন্ডের অনুষ্ঠান হবে না। তবে প্রধানমন্ত্রী যদি আবার চিন্তা করেন হবে, তাহলে হবে।