চলতি বছর হজে গিয়ে তাপপ্রবাহ ও অসহনীয় গরমে এ পর্যন্ত মৃত্যু হয়েছে ৯২২ জন হজযাত্রীর। নিখোঁজ রয়েছেন আরো অনেকে। বুধবার (১৯ জুন) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে বার্তাসংস্থা এএফপি। এ বছর হজ শুরু হয়েছে গত ১৪ জুন থেকে। সৌদির আবহওয়া দপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গত এক সপ্তাহ ধরে মক্কার তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করছে।
মৃতদের অধিকাংশই মিসরের নাগরিক। একজন আরব কূটনীতিক বুধবার এএফপিকে জানিয়েছেন, মিশরীয় হজযাত্রীদের মধ্যে মৃত্যু লাফিয়ে ‘কমপক্ষে ৬০০’ হয়েছে, যা একদিন আগেও তিন শতাধিক ছিল। বেশিরভাগেরই মৃত্যু হয়েছে অসহনীয় গরমের কারণে। মিসরের বাইরে জর্ডান, ইন্দোনেশিয়া, ইরান, সেনেগাল, তিউনিসিয়া, বাংলাদেশ ও ভারতের নাগরিকরাও রয়েছেন মৃত হজযাত্রীদের তালিকায়। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রায় ১৮ লাখ হজযাত্রী এবার হজ করতে সৌদি এসেছেন। এই হজযাত্রীদের মধ্যে বৃদ্ধ ও অসুস্থ অনেকে রয়েছেন। তাছাড়া এমন হাজার হাজার হজযাত্রী রয়েছেন, যারা বিধি মেনে সৌদিতে আসেননি। ফলে প্রখর তাপপ্রবাহ থেকে সুরক্ষা নিশ্চিতে হজযাত্রীদের জন্য যেসব সুবিধা ও পরিষেবা বরাদ্দ করেছে সৌদির সরকার, সেসব তারা পাচ্ছেন না। অবৈধভাবে সৌদিতে প্রবেশ করা এই যাত্রীরা এমনকি থাকা, খাওয়া এবং এয়ার কন্ডিশন সুবিধাও পাচ্ছেন না।
তিউনিসিয়ার ৭০ বছর বয়সী হজযাত্রী মাবরুকা বিনতে সালেম শুশানা গত শনিবার আরাফাত ময়দানে হজের চূড়ান্ত পর্বের পর থেকে নিখোঁজ রয়েছেন বলে তার স্বামী মোহাম্মদ বুধবার (১৯) জুন এএফপিকে জানিয়েছেন। তিনি জানান, তার স্ত্রী অনিবন্ধিত হজযাত্রী ছিলেন, তার কাছে আনুষ্ঠানিক হজ পারমিট ছিল না। ফলে তিনি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত সুবিধাগুলো ব্যবহার করতে পারেননি, যা হজযাত্রীদের শীতল হতে দেয়। মোহাম্মদ আরও জানান, ‘তার স্ত্রী একজন বয়স্ক নারী। তিনি ক্লান্ত ছিলেন। খুব গরম অনুভব করছিলেন এবং তার ঘুমানোর জায়গা ছিল না। আমি সব হাসপাতালে তার খোঁজ করেছি। এখন পর্যন্ত আমার কোনো খোঁজ নেই।’ নিখোঁজ হজযাত্রীদের পরিবার পরিজন ও আত্মীয়রা ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাদের ছবি আপলোড করে সহায়তার আকুতি জানিয়েছেন।
হজ ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের একটি। শারীরিক ও আর্থিক সামর্থ্যবান মুসলিম নারী-পুরুষের জীবনে একবার হজ করা ফরজ। গত মাসে প্রকাশিত সৌদি সমীক্ষা অনুসারে, প্রতি দশকে এই এলাকার তাপমাত্রা ০.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস (০.৭২ ডিগ্রি ফারেনহাইট) বাড়ছে। সৌদি আরব মৃত ও নিখোঁজ হজযাত্রীদের কোনো তালিকা বা সংখ্যা প্রকাশ করেনি। কেবল গত রোববারই হিটস্ট্রোক ও অন্যান্য তাপজনিত কারণে ২ হাজার ৭০০ জনেরও বেশি হজযাত্রী অসুস্থ হয়েছিল বলে জানিয়েছিল।
গত বছর দুই শতাধিক হজযাত্রীর মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছিল, বেশিরভাগই ইন্দোনেশিয়ার নাগরিক ছিলেন।