বাড়ির আঙিনায় বন্যার পানি। লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার বাঞ্ছনগর এলাকায় আজ সকালে ‘গ্যাসের সংযোগ বন্ধ। চুলাও পানির নিচে। আগুন জ্বালাতে পারছি না। সকালে রেস্তোরাঁ থেকে এনে নাশতা খেয়েছি। দুপুরেও রেস্তোরাঁ থেকে এনে খেতে হবে। বৃষ্টিতে বসতঘরেও পানি উঠেছে। বাড়ির আঙিনায় হাঁটুপানি। এত বৃষ্টি, এত পানি জীবনেও দেখিনি।’ আজ বৃহস্পতিবার সকালে এভাবেই দুর্ভোগের কথাগুলো বলছিলেন লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার বাঞ্ছানগর এলাকার পাটোয়ারীবাড়ির আবুল কালামের স্ত্রী সোমা বেগম। তাঁর মতো হাজারো বাসিন্দা চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। লক্ষ্মীপুরে সার্বিক জলাবদ্ধতার পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। ভারী বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। বর্তমানে জেলার পাঁচটি উপজেলায় জলাবদ্ধতা প্রকট আকার ধারণ করেছে। চার দিন ধরে বেশির ভাগ ঘরবাড়ি জলমগ্ন হয়ে আছে।
বন্যার কারণে আটকে পড়া মানুষজনকে উদ্ধার করে নিয়ে যাচ্ছেন রেড ক্রিসেন্টের কমৃীরা। গতকাল বিকেলে লক্ষ্মীপুরের কমলনগর এলাকায় লক্ষ্মীপুর জেলা সদর, রায়পুর, রামগঞ্জ, রামগতি ও কমলনগর উপজেলার নিম্নাঞ্চলের বসতবাড়ি ও রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় দিশাহারা হয়ে পড়েছেন লাখ লাখ মানুষ। কয়েক দিনের টানা বর্ষণ ও জোয়ারে মেঘনা নদীসহ জেলার সব কটি খালের পানি বাড়ছে বলে জানিয়েছে লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ড। এতে কয়েক হাজার পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। তলিয়ে গেছে অমন ধানের খেতসহ শত শত হেক্টর জমি শাকসবজি। রামগতি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের আবহাওয়া পর্যবেক্ষক সোহরাব হোসেন বলেন, গত চার দিনে লক্ষ্মীপুরে ৩১২ দশমিক ৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। নদীতে ৩ নম্বর সতর্কসংকেত ছিল। এখন তা সরিয়ে ফেলা হয়েছে। দু–এক দিনের মধ্যে আবহাওয়ার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আজ সকালে কমলনগরে সরেজমিনে দেখা গেছে, চরাঞ্চলের ঘরবাড়ি এখনো ডুবে আছে। অনেক টিনের ঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। বিশেষত চরাঞ্চলে বিশুদ্ধ পানির সংকট বেশি। অনেকে কোমরপানি ভেঙে, অনেকে নৌকা ও কলাগাছের ভেলায় দূর থেকে বিশুদ্ধ খাওয়ার পানি সংগ্রহ করছেন। সবজিখেত, বীজতলাসহ বিস্তীর্ণ ফসলি জমি ডুবে রয়েছে। চর রমণীমোহন ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবু ইউছুফ বলেন, পানি বাড়ছে, তবে ধীরে ধীরে। চরাঞ্চলে সব নলকূপ ডুবে যাওয়ায় বর্তমানে বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। ওই সব এলাকায় পানি ফুটিয়ে খেতে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। কমলনগর উপজেলার নাসিরগঞ্জ এলাকায় পানিবন্দী মো. মাহাবুব বলেন, ‘গতকাল বুধবার দিবাগত রাত দুইটার দিকে হাঁটুসমান পানি মাড়িয়ে ছোট সন্তানকে মাথায় নিয়ে পরিবারসহ অন্যের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছি। আমার বাড়ির চারদিকে থইথই পানি। ঘরবাড়ি সব ডুবে গেছে। জিনিসপত্র কোনো কিছুই বের করতে পারিনি।’
ওই এলাকার বাসিন্দা মো. রেজাউল বলেন, ঘরের ভেতরে দুই ফুট পানি। বিদ্যালয়েও আশ্রয় নেওয়ার মতো অবস্থা নেই। ক্লাসরুমেও পানি ঢুকেছে। লক্ষ্মীপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী নাহিদ-উজ জামান খান বলেন, মেঘনা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এত পানি আগে কখনো দেখা যায়নি। এতে নিম্নাঞ্চলের বসতবাড়ি ও রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। জানতে চাইলে লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক সুরাইয়া জাহান বলেন, ‘জলাবদ্ধতা নিরসনে উপজেলা প্রশাসন সাধারণ মানুষদের নিয়ে কাজ করছে। ইতিমধ্যে বিভিন্ন খালের বাঁধ কেটে দেওয়া হয়েছে। খাল-নালা পরিষ্কারের কার্যক্রম অব্যাহত আছে। বন্যার্তদের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় আশ্রয় নিতে বলা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর মধ্যে শুকনা খাবার বিতরণ করা হচ্ছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করছি।’