বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় আহত ব্যক্তিদের ৪৫ শতাংশের আঘাত গুরুতর। আহত ব্যক্তিদের ৭০ শতাংশ গুলি বা কাঁদানে গ্যাসের শেলের আঘাত পেয়েছেন। তাঁদের ৬৪ শতাংশের আর্থিক সহায়তা প্রয়োজন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কল সেন্টার স্বাস্থ্য বাতায়ন ১৬২৬৩ আন্দোলনের সময় আহত ৭৫২ জন ব্যক্তির তথ্য বিশ্লেষণ করে এই পরিসংখ্যান দিয়েছে। ১ থেকে ২৪ আগস্ট পর্যন্ত কল সেন্টারে এসব ব্যক্তি সহায়তার জন্য ফোন করেছিলেন। কল সেন্টার পরিচালনার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, আহত ব্যক্তিদের ফোনের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে।
কল সেন্টারে একটি নির্দিষ্ট কাঠামোয় আহত রোগীর তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। পাশাপাশি রোগীকে প্রশিক্ষিত চিকিৎসক নিয়মিত পরামর্শ দিচ্ছেন। এ ছাড়া কোনো রোগীর হাসপাতালে যাওয়ার দরকার হলে তাঁকে সে বিষয়ে দিকনির্দেশনাও দেওয়া হচ্ছে। শরীরের কোন স্থানে আঘাত লেগেছে, তা বিশ্লেষণ থেকে জানা গেছে। সবচেয়ে বেশি আঘাত লেগেছে মানুষের পায়ে। পায়ে আঘাত লেগে আহত হয়েছেন ২১২ জন। হাতে ১৬৮ জন, পিঠে ও ঘাড়ে ১০৩ জন আঘাত পেয়েছেন। আন্দোলনে ঠিক কত মানুষ আহত হয়েছেন, তার সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া কঠিন। ২৩ থেকে ২৭ জুলাই ঢাকার সরকারি–বেসরকারি ৩৮টি হাসপাতাল ঘুরে প্রথম আলো সাড়ে ছয় হাজারের বেশি আহত মানুষের তথ্য পেয়েছিল। সারা দেশে আহত মানুষ ছিলেন আরও বেশি। এরপর সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনের চূড়ান্ত দিনগুলোয় আরও অনেক মানুষ আহত হন। বিশেষ করে ৪ ও ৫ আগস্ট বহু মানুষ আহত হন। সংঘর্ষ-সহিংসতায় আহত ব্যক্তিদের সঠিক সংখ্যা বের করার জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সাবেক জ্যেষ্ঠ সচিব মোহাম্মদ হুমায়ুন কবিরকে প্রধান করে একটি কমিটি করা হয়েছে। মোহাম্মদ হুমায়ুন কবির গতকাল রোববার বলেন, তাঁরা কাজ শুরু করেছেন। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ম্যানেজমেন্ট ইনফরমেশন সিস্টেম (এমআইএস) তথ্য সংগ্রহের দায়িত্বে। সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল থেকে তথ্য নেওয়া হচ্ছে। আরও অন্য উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হবে। স্বাস্থ্য বাতায়নের চিকিৎসকেরা বলেছেন, গুরুতর ও মাঝারি আঘাত পাওয়া ব্যক্তিদের হাসপাতালে থেকে চিকিৎসার দরকার হয়।
স্বাস্থ্য বাতায়নের বিশ্লেষণ আহত রোগীদের তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, আহত ব্যক্তিদের ৬৫ শতাংশ রাবার বুলেট বা গুলিতে আহত হয়েছেন। লাঠি, রড বা ধারালো অস্ত্রের দ্বারা আহত হয়েছেন ২৩ শতাংশ মানুষ। পুলিশের ছোড়া কাঁদানে গ্যাসের শেলে আহত হয়েছেন ৫ শতাংশ। আর বাকি ৭ শতাংশ ধাক্কাধাক্কি বা দৌড়ানোর সময় পড়ে গিয়ে আহত হয়েছেন। শরীরের কোন স্থানে আঘাত লেগেছে, তা বিশ্লেষণ থেকে জানা গেছে। সবচেয়ে বেশি আঘাত লেগেছে মানুষের পায়ে। পায়ে আঘাত লেগে আহত হয়েছেন ২১২ জন। হাতে ১৬৮ জন, পিঠে ও ঘাড়ে ১০৩ জন আঘাত পেয়েছেন। বুকে ও চোখে আঘাত পেয়েছেন যথাক্রমে ৮৫ ও ৯৪ জন। আর মাথায় আঘাত পেয়েছেন ১৪৬ জন। তবে অনেকে শরীরের একাধিক স্থানে আঘাত পেয়েছেন। আহত ব্যক্তিকে তো ফোনে কিছু পরামর্শ দেওয়া হয়। এ ছাড়া কোনো রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে বিড়ম্বনার শিকার হলে তা যদি স্বাস্থ্য বাতায়নে ফোন করে জানান, তাহলে স্বাস্থ্য বাতায়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সংশ্লিষ্ট হাসপাতালে যোগাযোগ করে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেন। সিনেসিস আইটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিজাম উদ্দীন আহমেদ আঘাতের মাত্রা বা তীব্রতাও জানার চেষ্টা করেছে স্বাস্থ্য বাতায়ন। তাতে দেখা গেছে, গুরুতর আহত ৪৫ শতাংশ ও মাঝারি আহত হয়েছে ৩১ শতাংশ। আর মৃদু আহত ২৪ শতাংশ। স্বাস্থ্য বাতায়নের চিকিৎসকেরা বলেছেন, গুরুতর ও মাঝারি আঘাত পাওয়া ব্যক্তিদের হাসপাতালে থেকে চিকিৎসার দরকার হয়। স্বাস্থ্য বাতায়নে ফোন করা আহত ব্যক্তিদের ৮৮ শতাংশ বাসায় আছে, আর হাসপাতালে আছে ১২ শতাংশ। আহত ব্যক্তিদের ৬৪ শতাংশ বলেছেন, তাঁদের আর্থিক সহায়তা দরকার। ১৬২৬৩ নম্বরে ফোন করলে যেকোনো মানুষ স্বাস্থ্য বিষয়ে পরামর্শ পায়। করোনা মহামারির সময় বহু মানুষ বাড়িতে থেকে করণীয় বিষয়ে জানতে পেরেছিল। এখন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় আহত ব্যক্তিরা পরামর্শ পাচ্ছেন। সরকারের স্বাস্থ্য বাতায়ন পরিচালনা করে সিনেসিস আইটি নামের একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান। সিনেসিস আইটির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিজাম উদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘আহত ব্যক্তিকে তো ফোনে কিছু পরামর্শ দেওয়া হয়। এ ছাড়া কোনো রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়ে বিড়ম্বনার শিকার হলে তা যদি স্বাস্থ্য বাতায়নে ফোন করে জানান, তাহলে স্বাস্থ্য বাতায়নের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সংশ্লিষ্ট হাসপাতালে যোগাযোগ করে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেন। কোন হাসপাতালে গেলে আহত ব্যক্তি সঠিক চিকিৎসা পাবেন, সেই পরামর্শ তাঁকে দেওয়া হয়।’