ক্রীড়া ডেস্ক : এক দিনে কত রং ছড়াল সিলেটের সবুজের আচ্ছাদনে। ব্যাট-বলের তীব্র লড়াই হলো ক্রিকেটের গৌরবের ফরম্যাট টেস্ট ক্রিকেটের ২২ গজে। শুরুতে বাংলাদেশের দাপট। মাঝে শ্রীলঙ্কার প্রতিরোধ। এরপর প্রতি আক্রমণ। শেষমেশ আবার বাংলাদেশের ফিরে আসা। আবার পিছিয়ে পড়া। পুরো দিনটিকে বর্ণনা করতে এমন কিছু বলা যায়; সুন্দর সকাল, বিষন্ন দুপুর, স্বস্তির পর অস্বস্তির বিকেল।দিনশেষে এগিয়ে থাকার সুযোগ থাকলেও তা হাতছাড়া। টেস্ট ম্যাচের আনন্দ এখানে। প্রতিদিন নায়ক হওয়ার সুযোগ থাকে। প্রতি সেশনে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার সুযোগ থাকে। বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কার প্রথম টেস্টের প্রথম দিন কত রং পাল্টাল।
প্রথম সেশনে বাংলাদেশের পেসারদের তোপে শ্রীলঙ্কার রান ৫ উইকেটে ৫৭। ষষ্ঠ উইকেটের সুযোগ হাতছাড়া হয় মাহমুদুল হাসান জয়ের ক্যাচ মিসে। সেখান থেকে লঙ্কানদের প্রতিরোধ ও প্রতি আক্রমণ। ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা ও কামিন্দু মেন্ডিসের জুটিতে চলে আসে ২০২ রান। দুজনেই পেয়ে যান সেঞ্চুরি। সমান ১০২ রান প্রত্যেকের। ওই প্রতিরোধ ভাঙার পর ২১ রানে নেই পরের ৪ উইকেট। সব মিলিয়ে ২৮০ রানে শেষ তাদের ইনিংস। তিনশর নিচে অতিথিদের আটকে রেখে বোলিংয়ে নিজেদের পরিকল্পনা, রণ কৌশল ভালোভাবেই কাজে লাগিয়েছে বাংলাদেশ। পেসার খালেদ আহমেদ ও অভিষিক্ত নাহিদ রানার ৩টি করে উইকেট দলকে এগিয়ে নেন। সঙ্গে শরিফুল ও তাইজুলের পকেটে ১টি করে উইকেট।
ফিল্ডিংয়ে ক্যাচ ছাড়লেও দুই রান আউটে নিজেদের মান কিছুটা রেখেছে বাংলাদেশ। কিন্তু পড়ন্ত বিকেলে ব্যাটিংয়ে নেমে ৩ রানে ৩২ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ অস্বস্তি নিয়ে দিন শেষ করেছে তা বলতে দ্বিধা নেই। ফলে সকালটা যতটা সুন্দরভাবে শুরু হয়েছিল শেষটা হয়েছে ঠিক ততটাই বাজেভাবে।
দিনের শুরুটা হয়েছে বাংলাদেশের মনমতো। বৃষ্টিভেজা কন্ডিশনে টস জিতে নাজমুল হোসেন শান্ত এগিয়ে যান। বোলিং নিতে শান্ত দ্বিতীয়বার চিন্তা করেননি। নয় বছর পর দেশের মাটিতে টস জিতে ফিল্ডিং নিয়ে বাংলাদেশের ম্যাচ পরিকল্পনা স্পষ্ট হয়ে যায়। সঙ্গে তিন পেসারের সঙ্গে দুই স্পিনার নিয়ে দল বুঝিয়ে দিয়েছে ম্যাচটার নাটাই নিজেদের নিয়ন্ত্রণে চায়। শুরুটা ওভাবেই হয়েছিল।
লঙ্কানদের শুরুর পাঁচ ব্যাটসম্যানের দুজন বিশের ঘর পেরোতে পারেননি, তিনজন সিঙ্গেল ডিজেটেই আউট। খালেদ নিজের প্রথম ওভারে স্লিপে মিরাজের হাতে তালুবন্দি করান নিশান মাদুশঙ্কাকে। এরপর একই ওভারে তার শিকার কুশল মেন্ডিস ও দিমুথ করুণারত্নে। মেন্ডিস তার অফস্টাম্পের বাইরের বল খোঁচা দিয়ে পয়েন্টে ক্যাচ দেন। করুণারত্নে বল বুঝতে না পেরে হন বোল্ড। এরপর অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুজের ইনিংস থেমে যায় শান্তর সরাসরি থ্রোতে, রান আউট হয়ে। বাঁহাতি পেসার শরিফুল ইসলাম নিজের প্রথম স্পেলে তেমন কিছু করতে পারেননি। তবে দ্বিতীয় স্পেলে ফিরে দারুণ পরিকল্পনায় নিয়ে নেন দিনেশ চান্দিমালের উইকেট। লেগ স্লিপে মিরাজকে এনে চান্দিমালকে আউট করেন। ৫৭ রানে নেই শ্রীলঙ্কার ৫ উইকেট।
সংখ্যাটা ৬ হতে পারত পরের বলে। যদি মাহমুদুল হাসান জয় নতুন ব্যাটসম্যান কামিন্দু মেন্ডিসের ক্যাচটা নিতে পারতেন। ওই ক্যাচেই দিনের চিত্র পাল্টে যায়। থিতু হওয়ার পর মেন্ডিস ও ধনাঞ্জয়া প্রতি আক্রমণে রান তোলেন। বাংলাদেশের ১০৩ নম্বর টেস্ট খেলোয়াড় হিসেবে অভিষেক হওয়া নাহিদ রানা শুরু থেকে ছিলেন ব্যয়বহুল। দ্রুত গতির বোলার হিসেবে তাকে দলে আনা হয়েছে। প্রথম ওভারের পঞ্চম বলে ১৪৫.৫ গতিতে বোলিং করে আলো ছড়িয়েছেন ঠিকই। এরপর ধারাবাহিক ১৪৪, ১৪৫ গতিতে বোলিং করেন। কিন্তু লাইন ও লেন্থে ছিল যথেষ্ট ঘাটতি। সুযোগ কাজে লাগিয়ে মেন্ডিস ও ধনাঞ্জয়া রান তোলেন দ্রুত।
ফিফটির পর চোখের পলকে তুলে নেন সেঞ্চুরি। নাহিদ শেষ সেশনে ফিরে আসেন স্বরূপে। তার লাফিয়ে উঠা বলে মেন্ডিস উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিলে পান সাফল্যের স্বাদ। এরপর তার শর্ট বলে মিড উইকেটে ক্যাচ দেন ধনাঞ্জয়া। দুজনই আউট হন ১০২ রান। এরপর প্রবাথ জয়াসুরিয়ার উইকেটও নেন দ্রুতগতির বোলার। ওই সময়েই তার হাত থেকে বের হয় আজকের দিনের সর্বোচ্চ ১৪৬.৩ কিমির আগ্নিগোলা। শেষ পর্যন্ত ২৮০ রানে তাদের আটকে দিয়ে বোলিংয়ে বাংলাদেশ স্বস্তি পেলেও পড়ন্ত বিকেলে হতশ্রী ব্যাটিংয়ে দিনটা হাতছাড়া করেছে স্বাগতিকরা।
বিশ্ব ফার্নোন্দোর পরপর দুই ওভারে জাকির হাসান ও নাজমুল হোসেন শান্ত এলবিডব্লিউ হন। রিভিউ নিয়ে তারা কেউ বাঁচতে পারেননি। বাংলাদেশ শিবিরে শেষ আঘাতটি করেন কাশুন রাজিতা। এই ম্যাচে বাংলাদেশের সবচেয়ে অভিজ্ঞ ক্রিকেটার মুমিনুল হক (৫৯ টেস্ট) স্লিপে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন সাজঘরে। ৩১ রানে ৩ উইকেট হারানো বাংলাদেশ আরো ১ রান যোগ করে দিন শেষ করেছে নড়বড়ে অবস্থানে। ২৪৮ রানে এখনও পিছিয়ে তারা। ম্যাচের ভাগ্য পাল্টাতে হলে দ্বিতীয় দিন তীব্র লড়াই করতে হবে। নয়তো ক্যাচ মিস ও ব্যাটিংয়ে বাজে শুরুর মাশুল গুনতে হবে।