একদিকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লোডশেডিং, তার ওপর ভূতুড়ে বিলে দিশেহারা টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে পল্লী বিদ্যুতের দেড় লাখ গ্রাহক। অভিযোগ উঠেছে, ভুঁতড়ে ও ভুয়া বিলে বিদ্যুৎ বিভাগ কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। আগের বিলের সঙ্গে তুলনা করকে দেড় থেকে দুই গুন তো বটেই কোনো কোনো ক্ষেত্রে গ্রাহককে চার থেকে পাঁচগুণ পর্যন্ত বিল ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সমস্যা সমাধানে অভিযোগ নিয়ে পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে গেলেও প্রতিকার পাচ্ছেন না গ্রাহকরা।
বরং হতে হচ্ছে নানা হুমকি ও হয়রানির শিকার।শনিবার (২ নভেম্বর) অনুসন্ধানে জানা গেছে, টাঙ্গাইল পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-১ এর অধীনে মির্জাপুর উপজেলা সদরে বাওয়ারকুমারজানি এলাকায় একটি এবং গোড়াই শিল্পাঞ্চলের গোড়াই এলাকায় টাঙ্গাইল কটন মিলস সংলগ্ন একটিসহ দুইটি জোনাল অফিস রয়েছে। দুইটি জোনাল অফিসের অধীনে মির্জাপুর পৌরসভা, মহেড়া, জামুর্কি, ফতেপুর, বানাইল, আনাইতারা, ওয়ার্শি, ভাতগ্রাম, ভাওড়া, বহুরিয়া, গোড়াই, রতিফপুর, আজগানা, তরফপুর এবং বাঁশতৈল ইউনিয়নে আবাসিক, ক্ষুদ্র, মাঝারি ও ভারি শিল্পসহ গ্রাহক সংখ্যা রয়েছে প্রায় এক লাখ ৬০ হাজার।মির্জাপুর পৌরসভার এক গ্রাহক অভিযোগ করেন, চলতি বছরের জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি, মার্চ, এপ্রিল, মে, জুন, জুলাই ও আগস্টে মাসে তার মিটারে বিল এসেছিল ৬৫০ টাকা থেকে ১২০০ টাকা। সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর মাসে তাকে বিল ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে ২২০০ টাকা। গত কয়েক মাস ধরে চলছে তীব্র লোডশেডিং।
দিনে গড়ে ৬-৭ ঘণ্টাও বিদ্যুৎ পাচ্ছে না। তার ওপর বিল দেওয়া হয়েছে দুই থেকে তিনগুন। তিনি এটা মেনে নিতে পারছেন না। তার ধারণা, পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কারসাজির কারণে অতিরিক্ত বিল ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। তার মতো গোড়াইয়ের বাবুল সিকদার, জামুর্কির আবুল হাসেম, বাঁশতৈলের আব্দুল কাদের, আজগানার চাঁন মিয়াসহ অন্তত ৩০-৪০ জন গ্রাহক এমন অভিযোগ করেছেন। তাদের অভিযোগ, তাদের নামে অতিরিক্ত বিল ধরিয়ে দেওয়া হলেও মিটারের রিডিংয়ের সঙ্গে বিল কপির মিল নেই। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার দেওহাটা, গোড়াই, বহুরিয়া, তরফপুর, বানাইল ইউনিয়নের আশ্রয়ন কেন্দ্রে ভবঘুরে, দিনমজুরসহ অসহায় পরিবারগুলো ভূতুড়ে বিলের কারণে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পরেছেন বলে অভিযোগ করেছেন। তাদের অভিযোগ প্রতিটি গ্রাহককে জিম্মি করে পল্লী বিদ্যুৎ বিভাগ কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। কোনো অভিযোগ নিয়ে অফিসে গেলে তাদের নানাভাবে হয়রানি করা হয়।
পল্লী বিদ্যুৎ বিভাগের মিটার রিডার এবং অফিসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এই ভুয়া বিল তৈরির সঙ্গে জড়িত। জুন মাস ক্লোজিং এর নামে বিপুল অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। তদন্ত সাপেক্ষে দায়ীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আবাসিক, ক্ষুদ্র, মাঝারি ও ভারি শিল্পের গ্রাহকরা দাবি জানিয়েছেন।এ ব্যাপারে গোড়াই শিল্পাঞ্চলের ক্ষুদ্র, মাঝারি ও ভারি শিল্পের অন্তত ১০ জন কর্মকর্তা অভিযোগ করেন, একদিকে দিনে রাতে লোডশেডিংয়ের কারণে তাদের কোটি কোটি টাকার লোকসান গুনতে হচ্ছে। অন্যদিকে পল্লী বিদ্যুৎ বিভাগের অতিরিক্ত ভুতড়ে বিলের কারণে বিল পরিশোধ করতে তারা চরম বিপাকে পরেছেন। তার তদন্ত সাপেক্ষে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানিয়েছেন।এ ব্যাপারে টাঙ্গাইল পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির মির্জাপুর জোনাল অফিসের উপ-মহাব্যবস্থাপক (ডিজিএম) মো. জসিম উদ্দিন বলেন, মির্জাপুর উপজেলায় দুইটি জোনাল অফিসের অধীনে গ্রাহক সংখ্যা প্রায় দেড় লাখ। তার দাবি, গ্রাহকদের বিল বেশি হওয়ার মূল কারণ বিদ্যুতের অধিক ব্যবহার। ফলে প্রতিটি মিটারের বিপরীতে একটু বেশি বিল হয়েছে। যদি কেউ মনে করেন তার খুব বেশি বিল এসেছে, তাহলে অফিসে এলে বিল সংশোধন করে দেওয়া হচ্ছে।