কোটা সংস্কারের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করার অভিযোগ রয়েছে পল্লবী থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অপূর্ব হাসানের বিরুদ্ধে। সে সময় আন্দোলনকারীদের দমাতে অনেকটা হুমকির স্বরেই তাকে বলতে দেখা যায়, ‘মাইরা তো ফেলছি, এখন কী করবা।’ ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হলে সমালোচনার ঝড় ওঠে। এবার সেই ওসি অপূর্বের বিরুদ্ধে হলো অপহরণ ও গুমের মামলা।
২০১৬ সালে যশোরের বেনাপোলে রেজোয়ান নামে এক কলেজশিক্ষার্থী অপহরণ ও গুমের শিকার হন। এই ঘটনার আট বছর পর তার ভাই রিপন হোসেন বাদী হয়ে যশোরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলাটি করেন। ঘটনার সময় অপূর্ব হাসান বেনাপোল পোর্ট থানার ওসি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। মামলার বাকি দুই আসামি একই থানার তদন্ত কর্মকর্তা খন্দকার শামীম আহমেদ ও উপপরিদর্শক (এসআই) নূর আলম। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন মামলার বাদীপক্ষের আইনজীবী আলমগীর সিদ্দিকী। তিনি জানান, সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক জাকিয়া সুলতানা অভিযোগটি এজাহার হিসেবে গ্রহণের জন্য বেনাপোল পোর্ট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুমন ভক্তকে আদেশ দিয়েছেন।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, বেনাপোল মহিষাডাঙ্গা গ্রামের মিজানুর রহমানের ছেলে রেজোয়ান বাগআঁচড়া কলেজের স্নাতক (সম্মান) দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। ২০১৬ সালের ৪ আগস্ট বেলা ১২টার দিকে তিনি বেনাপোল ভূমি কার্যালয়ের পাশে রেজাউলের দোকানে চা পান করছিলেন। এ সময় বেনাপোল পোর্ট থানার এসআই নূর আলম ও অপর একজন মোটরসাইকেল নিয়ে সেখানে যায়। এরপর রেজোয়ানের নাম জানতে চায়। নাম বললে, ‘তোকেই খুঁজছি’ বলে তাকে মোটরসাইকেলে উঠতে বলে। এরপর তাকে নিয়ে সেখান থেকে চলে যায়। খবর পেয়ে পরিবারের লোকজন থানায় গেলে ওসি অপূর্ব হাসান তাদের বাড়াবাড়ি করতে নিষেধ করেন। অন্যথায় সবাইকে গুম করা হবে বলে হুমকি দেয়। পরবর্তীতে ৭ আগস্ট রেজোয়ান নিখোঁজ উল্লেখ করে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে গেলে ওসি (তদন্ত) খন্দকার শামীম আহমেদ লেখা সঠিক হয়নি বলে কাগজ ফেরত দেন। এরপর নিজের মনমতো জিডি লেখেন। ওই ঘটনার পর থেকে রেজোয়ানের কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি। রেজোয়ানের পরিবারের ধারণা, পুলিশ আটকের পর তাকে হত্যা করে মরদেহ গুম করেছে। ওই সময় পরিবেশ অনুকূলে না থাকায় মামলা করতে পারেনি পরিবার। বর্তমানে প্রেক্ষাপট অনুকূলে আসায় রেজোয়ানের ভাই রিপন হোসেন ন্যায়বিচার পেতে এ মামলা করেছেন বলে জানান আইনজীবী আলমগীর সিদ্দিকী। উল্লেখ্য, ওসি অপূর্ব হাসানের গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জ জেলায়। ২০১৩-২০১৮ সাল পর্যন্ত বেনাপোল বন্দর থানায় দায়িত্ব পালন করেন তিনি। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে, বেনাপোল বন্দর থানার ওসি থাকাবস্থায় অপূর্ব হাসান টার্গেট করে করে স্বর্ণ চোরাকারবারিদের কোটি কোটি টাকার স্বর্ণ আত্মসাৎ করেছেন। গড়ে তুলেছেন শত কোটি টাকার সম্পদ। প্রসঙ্গত, গত ১৭-১৮ জুলাই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে। যাতে দেখা যায়, ওসি অপূর্ব কোটা সংস্কার আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলছেন। সে সময় তার বাচনভঙ্গি ভালো দেখাচ্ছিল না। মিরপুর ১২ নম্বর সেকশন এলাকায় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলার সময় তিনি অন্য শিক্ষার্থীকে হত্যার বিষয়ে বলেন, ‘মাইরা তো আমরা ফেলছি, এখন কী করবা?’ এমনকি পুলিশ সদস্যদেরও তিনি ধমক দিয়ে বলেছিলেন, ‘যে গুলি করবে না, তাকে আমি গুলি করবো।’ এরপরই শিক্ষার্থীদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালায় পুলিশ। হতাহত হয় অনেকেই। পরে গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার প্রবল আন্দোলনের মুখে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়তে বাধ্য হন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আত্মগোপনে চলে যান সাবেক মন্ত্রী-এমপিসহ বেশকিছু পুলিশ কর্মকর্তা।