সমাচার ডেস্ক : ১২ বছর আগে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আড়াই বছরের মেয়ে ইসরাত জাহান রিয়াকে খুনের দায়ে মা রোজিনা আক্তার ও তার পরকীয়া প্রেমিক সুলতান মাহমুদকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার (২১ মার্চ) ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৪ এর বিচারক সৈয়দ আরাফাত হোসেনের আদালত এ রায় দেন।যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের পাশাপাশি প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড, অনাদায়ে আরও ৬ মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
রায় ঘোষণার সময় সুলতান মাহমুদকে কারাগার থেকে আদালতে হাজির করা হয়। রায় শেষে সাজা পরোয়ানা দিয়ে তাকে আবার কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। রোজিনা আক্তার পলাতক রয়েছেন। আদালত তার বিরুদ্ধে সাজা পরোয়ানাসহ গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন।
সংশ্লিষ্ট আদালতের বেঞ্চ সহকারী বেলাল হোসেন এসব তথ্য জানান।
জানা যায়, আড়াই বছরের মেয়ে ইসরাত জাহান রিয়াকে নিয়ে রোজিনা আক্তার ২০১২ সালের ৩ জানুয়ারি বেলা ১১ টার দিকে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালের গাইনী ওয়ার্ডে ডাক্তার দেখানোর জন্য যান। ডাক্তারের রুমে প্রবেশ করার সময় ডাক্তারের রুমের সামনে আয়া সেলিনা বেগম তার মেয়েকে নিয়ে ডাক্তারের রুমের মধ্যে প্রবেশ করতে বাধা দেন। রিয়াকে তিনি আয়ার কাছে রেখে ডাক্তারের রুমে প্রবেশ করেন। ২০ মিনিট পর রোজিনা আক্তার ডাক্তারের রুম থেকে বের হয়ে মেয়ে রিয়াকে দেখতে না পেয়ে আয়ার কাছে জিজ্ঞাসা করেন রিয়া কোথায়। আয়া তার মেয়েকে দেখেননি বলে জানান। রোজিনা আক্তার তার মেয়েকে খোঁজাখুজির এক পর্যায়ে অন্য এক রোগী জানান, কালো কোর্ট পরিহিত এক ব্যক্তি তার মেয়েকে বাবা পরিচয় দিয়ে নিয়ে গেছে। নিয়ে যাওয়ার সময় তার মেয়ে অনেক কান্নাকাটি করেছে। রোজিনা আক্তার বিষয়টি তার স্বামী নুরুল ইসলামকে জানান। নুরুল ইসলাম সাথে সাথে ঢামেক হাসপাতালে এসে মেয়েকে খোঁজার এক পর্যায়ে বেলা পৌনে ২টার দিকে হাসপাতালের নিউক্লিয়ার আল্ট্রাসাউন্ড সেন্টার, ১২ তলা দালানের ৩য় তলায় মেয়ের লাশ দেখতে পান।
এ ঘটনায় ৫ জানুয়ারি নুরুল ইসলাম অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে শাহবাগ থানায় মামলা করেন। মামলার তদন্তকালে সুলতান মাহমুদকে গ্রেপ্তার করা হয়। তিনি আদালতে দেওয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জানান, পরকীয়া প্রেম ও অনৈতিক সম্পর্কের কারণে রিয়াকে শ্বাসরোধে হত্যা করেছেন।
মামলাটি তদন্ত করে ২০১২ সালের ২৬ নভেম্বর দুই জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট জমা দেন তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের গোয়েন্দা ও অপরাধ বিভাগের পরিদর্শক তপন চন্দ্র সাহা। পরের বছরের ৪ সেপ্টেম্বর আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জগঠন করা হয়। মামলার বিচার চলাকালে আদালত ২৬ জন সাক্ষীর মধ্যে ১০ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন।
রাষ্ট্রপক্ষে মামলাটি পরিচালনা করেন সংশ্লিষ্ট আদালতের স্পেশাল পাবলিক প্রসিকিউটর ফারুক-উজ্জামান ভূইয়া (টিপু)। আসামি সুলতানের পক্ষে ছিলেন জাকির হোসাইন।