টাঙ্গাইলে কিলার গ্যাং(হত্যাকারী দল) নামক একটি সংগঠনের প্যাডে এক মাছ ব্যাবসায়ীকে চিঠি দিয়ে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবির ঘটনায় বিএনপির তিন নেতাসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। শনিবার(২ আগস্ট) ভোর ও শুক্রবার(১ আগস্ট) রাতে টাঙ্গাইল পৌরসভার সন্তোষ এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। শনিবার(২ আগস্ট) দুপুরে টাঙ্গাইল সদর থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) তানভীর আহমেদ গ্রেপ্তারর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
গ্রেপ্তারকৃতরা হচ্ছেন, টাঙ্গাইল শহর বিএনপির ৮নং ওয়ার্ডের সভাপতি গোলাম রাব্বানী, সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম মিয়া, ৭নং ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক জুবায়ের হোসেন, স্থানীয় আব্দুল্লাহ আল মামুন ও সাব্বির মিয়া।
সদর থানার ওসি তানভীর আহমেদ জানান, জেলা গোয়েন্দা(ডিবি) পুলিশের সহযোগিতায় পৃথক অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে টাঙ্গাইল শহর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইজাজুল হক সবুজ জানান, বিএনপির নেতা-কর্মীদের ষড়যন্ত্রমূলকভাবে ফাঁসানো হয়েছে।
জানা যায়, বৃহস্পতিবার(৩১ জুলাই) রাতে সদর উপজেলার পৌরসভার সন্তোষ এলাকার মাছ ব্যবসায়ী মো. আজাহারুল ইসলামের কর্মচারীর হাতে অচেনা এক লোক একটি চিঠি দিয়ে চলে যায়। সেই চিঠি শুক্রবার(১ আগস্ট) সকালে সেই কর্মচারী ব্যবসায়ী মো. আজাহারুল ইসলামকে দেয়। চিঠিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ায় ব্যবসায়ীদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়- ‘চিঠি পাওয়ার পর তুই যদি বিষয়টি নিয়ে কারো সাথে শেয়ার করস বা আইনি প্রক্রিয়ায় যাস তাহলে তোকে কবর দেয়ার জন্য তোর লাশ পরিবার খুঁজে না পাওয়ার ব্যাবস্থা আমরা করবো।’ চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়- ‘মনে রাখবি প্রশাসন তোর সাথে সব সময় থাকবে না। আর বাচঁতে পারবি না। তোর সঠিক বুদ্ধিমত্তার সিদ্ধান্ত তুইসহ তোর পরিবার সুরক্ষিত থাকবে। দীর্ঘদিন ধরে মাছ ব্যবসা করে যাচ্ছিস। এতে তোর কোন প্রতিদ্বন্দ্বী নাই। দাকিকৃত ৫ লাখ টাকা তোর কাছে কিছু না। তাই আগামী আগস্টের ৩ তারিখে রবিবার সন্ধা ৭টার সময় একটি শপিং ব্যাগে করে কাগমারী মাহমুদুল হাসানের বাসার সামনে একটি গাছে ফরহাদের ছবি লাগানো আছে সেই গাছের নিচে রেখে যাবি।’
মাছ ব্যবসায়ী মো. আজাহারুল ইসলাম জানান, তার কর্মচারী নিশার কাছে বৃহস্পতিবার রাতে অচেনা একজন লোক একটি চিঠি দেয়। চিঠি শুক্রবার সকালে তার হাতে আসে। এসময় কর্মচারী বলেন একটি ক্লাব থেকে আপনাকে এই চিঠি দিয়ে গেছে। চিঠি খুলে দেখার পর তিনি ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েন।
তিনি জানান, এ বিষয় তিনি সন্তোষ পুলিশ ফাঁড়িতে মৌখিকভাবে জানান। বিষয়টি নিয়ে তিনি ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকতাদের সঙ্গে কথা বলেন। পরে তিনি সদর থানায় লিখিত অভিযোগ করেন।
সন্তোষ বাজার কমিটির আহ্বায়ক জুবায়ের হোসেন জানান, মাছ ব্যবসায়ী আজাহার ভাই একজন সৎ মানুষ। তিনি দীর্ঘদিন ধরে মাছ ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। হঠাৎ করে তিনি শুনতে পান তার কাছে একটি চিঠি এসেছে। সে চিঠিতে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেছে। এ ধরনের ঘটনা সন্তোষ এলাকায় দেশ স্বাধীন হওয়ার পর এ পর্যন্ত শুনতে পাননি। তাই এ চিঠিতে ব্যবসায়ী মহলে এক ধরনের আতঙ্ক কাজ করছে।
টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার(সদর সার্কেল) এইচএম মাহবুব রেজওয়ান সিদ্দিকী জানান, বিষয়টি জানতে পেরে তিনি সদর থানার ওসির সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেন। একই সঙ্গে জেলা গোয়েন্দা পুলিশকে সংযুক্ত করে দ্রুত প্রাথমিক তদন্তের পর অভিযুক্তদের সনাক্ত করে ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।