গত ৪ আগস্ট সকালে টাঙ্গাইল শহরের বিবেকানন্দ হাইস্কুল ও কলেজের সামনে (বটতলা) বৈষম্য বিরোধী ছাত্র—জনতার বিশাল মিছিলে গুলি বর্ষণ করে আওয়ামী লীগের ক্যাডার বাহিনী। এতে দুই ছাত্র গুলি বিদ্ধ হয় ও বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থীকে পিটিয়ে আহত করা হয়। পরে ছাত্র—জনতার ধাওয়ার মুখে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা পালিয়ে যায়।
এই গুলি ও হামলার নির্দেশ দিয়েছিলেন বিবেকানন্দ হাইস্কুল এ্যন্ড কলেজের অধ্যক্ষ ও জেলা আওয়ামী লীগের উপ—দপ্তর সম্পাদক আনন্দ মোহন দে । মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) সকালে টাঙ্গাইল প্রেস ক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সংবাদে লিখিত ভাবে বিষয়টি জানিয়েছেন বিবেকানন্দ স্কুল এ্যন্ড কলেজের ইসলাম শিক্ষা বিষয়ের প্রভাষক আবু দাউদ। সাংবাদিক সম্মেলনে অধ্যক্ষ আনন্দ মোহন দের বিরুদ্ধে স্কুল এন্ড কলেজের বিপুল পরিমান অর্থ আত্মসাৎ, স্বজনপ্রীতি, অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা ও রাজনৈতিক প্রভাব খাটানোর অভিযোগ তুলে ধরা হয়।
সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে জানানো হয়, ঐতিহ্যবাহী বিবেকানন্দ হাইস্কুল এন্ড কলেজ, প্রায় শতবর্ষী একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডির সভাপতি হিসাবে টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জোয়াহেরুল ইসলাম (ভিপি জোয়াহের) ও তার স্ত্রী জনাব রওশন আরা খান দায়িত্ব পালন করে আসছেন। আওয়ামী পরিবার কেন্দ্রিক সভাপতির ছত্রছায়ায় অধ্যক্ষ আনন্দ মোহন দে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিকে একটি রাজনৈতিক কার্যালয়ে পরিণত করেন। এমন কি অধ্যক্ষ আনন্দ মোহন দে গভর্নিং বডির সভাপতি (ভিপি জোয়াহের) এর হাত ধরে টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামীলীগের উপ— দপ্তর সম্পাদকের পদ লাভ করেন। এর পর হতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিকে অধ্যক্ষ আনন্দ মোহন দে রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে ব্যবহার করে আসছেন। রাজনৈতিক পদ পদবি ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে অধ্যক্ষ আনন্দ মোহন দে প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন দুর্নীতি, স্বজন—প্রীতি, অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা, দুর্ব্যবহার, রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে অর্থ তছরুপ ও প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক—শিক্ষিকা, কর্মচারী, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের শারীরিক ও মানসিক ভাবে নির্যাতন করে আসছেন।
লিখিত বক্তব্যে আরও জানানো হয়, গত ০৪ আগষ্ট সকাল ১১টায় কোটা বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনকারী ছাত্র জনতার সমন্বয়ে এক শান্তিপূর্ণ মিছিল বের হয়। শান্তিপূর্ণ মিছিলে অধ্যক্ষ আনন্দ মোহন দে এর নির্দেশে তাঁর নিজ অফিস কক্ষে (দোতলা ভবন) টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দ ও আওয়ামীলীগের বিভিন্ন অঙ্গ সংগঠনের সন্ত্রাসী বাহিনী পিস্তল ও দেশীয় অস্ত্র, দা, কুড়াল, চাপাতি, লোহার রড নিয়ে পূর্ব থেকেই অবস্থান গ্রহণ করে। বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনকে প্রতিহত করার উদ্দেশ্যে মিছিলটি বিবেকানন্দ হাইস্কুল এন্ড কলেজের নিকট আসলে উক্ত অফিস কক্ষের পশ্চিম পাশের বারান্দা থেকে অধ্যক্ষ আনন্দ মোহন দে ও তার নির্দেশে ছাত্র জনতার উপর গুলি চালানো হয় ও ছাত্র জনতাকে হতাহত করা হয় এবং ছাত্র জনতার মিছিলের উপর হামলা করে ছাত্র— ছাত্রীদেরকে পাঁকা রাস্তায় ফেলে গলায় পা দিয়ে চেপে ধরে ও মারধর করে। আমরা শিক্ষক হিসেবে উক্ত ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই এবং প্রশাসনের নিকট দুঃস্কৃতিদের উপযুক্ত শাস্তি দাবি করছি। অধ্যক্ষ আনন্দ মোহন দে এর সবচেয়ে ন্যাক্কারজনক ঘটনা হলো তিনি তার অফিস কক্ষকে একটি মিনি পতিতালয়ে পরিণত করেন।
এড. জোয়াহেরুল ইসলামের মনোরঞ্জনের জন্য অধ্যক্ষের নিজস্ব কক্ষে মাঝে মধ্যেই কলগার্লকে এনে দিতেন তার শারীরিক চাহিদা মেটানোর জন্য। তার কক্ষে জোয়াহেরুল ইসলামকে অপকর্ম করার সুযোগ দিয়ে তিনি (অধ্যক্ষ) দরজার বাহিরে চেয়ারে বসে পাহারা দিতেন এবং পিয়ন—আয়াদের কাউকে তার রুমের আশেপাশে না থাকার জন্য নির্দেশ দিতেন। এ ঘটনা সকল প্রতিষ্ঠানের সকল শিক্ষক—কর্মচারী অবগত আছেন। এ বিষয়টি নিয়ে কোন প্রতিবাদ করলে তাকে ভয়—ভীতি ও চাকরিচ্যুত করার হুমকী দিতেন তিনি।
গত ০৭ আগস্ট পুবালী, ব্যাংক আকুর টাকুর পাড়া শাখা হতে, কলেজ শাখার সঞ্চয়ী হিসাব (হিসাব নং— ৮৮৫৫১) হতে শিক্ষক কর্মচারীদের প্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রদত্ত বেতন ভাতার নামে ৮ লাখ টাকা উত্তোলন করেন এবং তা নিজে আত্মসাৎ করে অদ্যবধি পলাতক রয়েছেন। জানুয়ারি ২০২৪ হতে আগষ্ট ২০২৪ পর্যন্ত বিবেকানন্দ হাইস্কুল এন্ড কলেজের সঞ্চয়ী হিসাবগুলো থেকে অধ্যক্ষ আনন্দ মোহন দে উত্তোলন করেছেন সর্বমোট ১ কোটি ৮২ লাখ ৮০হাজার ৩৫৯ টাকা। অথচ শিক্ষক কর্মচারীদের বেতন, বোনাস ও পিএফ সহ মোট খরচ হয়েছে ৪৩ লাখ ৪৬হাজার ২২২ টাকা। অবশিষ্ট ১ কোটি ৩৯লাখ ৩৪ হাজার ১৩৭ টাকা অসামঞ্জস্যপূর্ণ ব্যয় দেখিয়েছেন তিনি