জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম শুধু বিদ্রোহী চেতনার কবি নন, বরং তাঁর সাহিত্য ও জীবনদর্শনে ছিল গভীর ধর্মীয় ও আধ্যাত্মিক অনুরাগ। বিশেষ করে হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রতি নজরুলের ভালোবাসা ও ভক্তি তাঁর বহু কবিতা ও গানে প্রতিফলিত হয়েছে।
নজরুল একবার লিখেছিলেন, জীবনের অন্যতম দুঃখ ছিল তিনি মদিনায় গিয়ে প্রিয় নবীর রওজা মোবারকে দোয়া করতে পারেননি। তাঁর এই আক্ষেপই প্রমাণ করে নবীজির প্রতি তাঁর হৃদয়ের অনুরাগ কতটা গভীর ছিল।
তাঁর বিখ্যাত কবিতা ‘বিদ্রোহী’-তে তিনি ঘোষণা করেছিলেন আমি আপনারে ছাড়া করি না কাহারে কুর্নিশ। এই বীরত্ববাদ মূলত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট থেকে এলেও পরবর্তী জীবনে নজরুলের চেতনা ধীরে ধীরে আধ্যাত্মিকতার দিকে ধাবিত হয়। তাঁর ‘বনগীতি’ দ্বিতীয় খণ্ডে রয়েছে হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে নিবেদিত আটটি কবিতা।
এর মধ্যে ‘আবির্ভাব’ ও ‘তিরোভাব’ কবিতায় নবীর জন্ম ও ওফাতকে তিনি কাব্যিকভাবে চিত্রিত করেছেন। এছাড়া আরও কয়েকটি গানে তিনি নবীজিকে ‘মদিনার বুলবুলি’, ‘দীন দরিদ্রের ত্রাতা’, ‘মানবজাতির মুক্তির দিশারি’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। ১৯৩৩ সালে নজরুল প্রকাশ করেন ‘কাব্য আমপারা’, যেখানে তিনি কোরআনের ৩৮টি সুরা অনুবাদ করেছিলেন।
শৈশব থেকেই তিনি কোরআন শিক্ষায় পারদর্শী ছিলেন এবং নবীর জীবন ও আদর্শ থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে সাম্য, মানবতা ও ন্যায় প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানিয়েছিলেন। শেষ জীবনে ব্যক্তিগত দুঃখ-কষ্ট তাঁকে আরও বেশি আধ্যাত্মিকতার দিকে নিয়ে যায়। তখন নবীজিই হয়ে ওঠেন তাঁর চোখে সর্বশ্রেষ্ঠ বীর, সর্বোচ্চ অনুপ্রেরণা। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ৪৯তম প্রয়াণ দিবসে তাঁকে জানাই গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা।