বিতর্কিত এস আলম গ্রুপের পর্ষদ ভেঙে দেওয়ার পর ইসলামী ব্যাংকের নবগঠিত পর্ষদ মঙ্গলবার (২৭ আগস্ট) প্রথম সভা করেছে। নতুন পর্ষদের চেয়ারম্যান, সোনালী ও রূপালী ব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদের নেতৃত্বে অনুষ্ঠিত সভায় সিদ্ধান্ত, হয় ২০১৭ সালের পর দেওয়া ঋণ, নিয়োগ–পদোন্নতি ও ট্রেজারি কার্যক্রমের ক্ষেত্রে কোন ধরনের অনিয়ম হয়েছে, তা তদন্তে তিনটি অডিট ফার্ম নিয়োগ দেওয়া হবে। এ ছাড়া ২০১৭ সালের আগে নিয়োগ পাওয়া যেসব কর্মকর্তা গত কয়েক দিনে নিয়মবহির্ভূতভাবে জোর করে পদোন্নতি নিয়েছেন, তা বাতিল হবে।
বৈঠকে উপস্থিত থাকা এক পরিচালক বলেন, ইসলামী ব্যাংকের ঋণ নিরীক্ষার পাশাপাশি ব্যাংকটির ট্রেজারি বিভাগ কোথায় টাকা ও ডলার বিনিয়োগ করেছে তা-ও খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত হয়েছে। পর্ষদের প্রথম বৈঠকে এস আলমের সময়কালে ছাড় করা সব ধরনের ঋণ নতুন করে নিরীক্ষার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তিনি উল্লেখ করেন, গত সাত বছরে ঋণ কারা কোন প্রক্রিয়ায় ঋণ নিয়েছেন, এসব ঋণের যথাযথ জামানত আছে কি না, তা খুঁজে বের করে সব ধরনের ঋণ নিরীক্ষা করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।গত সপ্তাহে এস আলমের ‘নিয়ন্ত্রণাধীন’ থাকা ইসলামী ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙে দিয়ে নতুন করে পাঁচ জন স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০১৭ সালের ৫ জানুয়ারি ইসলামী ব্যাংকের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার আগেও এস আলম গ্রুপ ব্যাংকটির চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ শাখা থেকে প্রায় চার হাজার কোটি টাকা ঋণ নেয়। ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর এটি থেকে গ্রুপটির ঋণ নেওয়ার হার আকাশচুম্বী হয়ে ওঠে।ইসলামী ব্যাংকের নথি অনুযায়ী, ১৮ আগস্ট পর্যন্ত ইসলামী ব্যাংকের মোট ঋণ পোর্টফোলিও দেড় লাখ কোটি টাকা। আর মোট আমানতের পরিমাণ এক লাখ ৫৩ হাজার ২৭৪ কোটি টাকা।এসব ঋণের মধ্যে এস আলম গ্রুপ ৭৪ হাজার ৯৭২ কোটি টাকার সুবিধা পেয়েছে বলে নথিপত্র পরীক্ষা করে জানা গেছে। এ পরিমাণ অর্থ ব্যাংকটির মোট ঋণের অর্ধেক।
এস আলম গ্রুপের সাতটি কোম্পানির নামে সরাসরি ১৪ হাজার ৪২৭ কোটি টাকা ঋণ রয়েছে ব্যাংকটি থেকে।২০১৬ সালের দিকে শীর্ষস্থানীয় বেসরকারি ব্যাংকগুলোর একটি ও সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স উপার্জনকারী ছিল ইসলামী ব্যাংক। এস আলম গ্রুপ সে বছর থেকে নতুন নিবন্ধিত বিভিন্ন কাগজসর্বস্ব কোম্পানির মাধ্যমে ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার অধিগ্রহণ শুরু করে। পরবর্তী বছরের মধ্যে অধিগ্রহণ সম্পন্ন হয়। এস আলম গ্রুপের সঙ্গে যুক্ত সাতটি কোম্পানি ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার কিনেছিল। এগুলোর সবগুলোই ২০১৬ সালে নিবন্ধিত হয়েছিল।